হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ।। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ৫/৬ নং ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে ঘুষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন তহশিলদার মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তার ঘুষ বানিজ্যে অতিষ্ট সেবা প্রত্যাশীরা। এক বিধবা নারীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করলে ওই নারী নিরুপায় হয়ে তাকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও কাজ হয়নি মর্মে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ করেছেন। তিনি নামজারী করতে ১৫ হাজার টাকা নেন মর্মে অনেকের অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে ভ‚মি উন্নয়ন কর দিতে আসা সেবা প্রত্যাশীদেরকে প্রথমে মোটা অংকের হিসাব দেন। পরে ঘুষ নিয়ে খাজনার পরিমান কমিয়ে দিয়ে রশিদ দেন। এতে করে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব তসরুফ করছেন রেজাউল। এছাড়াও অফিসে আগত নারীদের বোরকার মুখ খোলা ছাড়া সেবা দেন না মর্মেও অভিযোগ রয়েছে।
গত ১৯ নভেম্বর ২০২৩ হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগে উপজেলা সদর কামালখানী গ্রামের মোঃ আব্দুল তহিদ মিয়ার বিধবা মেয়ে মাসকুদা বেগম জানান, তার ভোগদখলে থাকা স্বামীর নামে সম্পত্তি গ্রাস করতে বিরুধীরা ১৪৪ ধারা চেয়ে আদালতে মামলা দিলে তহশিলদার রেজাউল করিম তদন্তভার পান। এরপর গত ১ মাস আগে ওই বিধবাকে অফিসে নিয়ে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন, অন্যতায় রিপোর্ট নারীর বিরুদ্ধে দেবেন বলে হুমকি দেন। অসহায় নারী নিরুপায় হয়ে তহশিলদার রেজাউলকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দেন। কিন্ত টাকা কম দেওয়ায় নারীর রিপোর্ট দিচ্ছেন না ঘুষখোর রেজাউল।
পুর্ব তোপখানা গ্রামের কিম্মত আলী জানান, কিছুদিন পূর্বে তিনি তার ক্রয়কৃত জমি নামজারী করতে গেলে তহশিলদার রেজাউল তার কাছে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। পরে নিরুপায় হয়ে তিনি তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে নামজারী করান। এ বিষয়ে জানতে তহশিলদার রেজাউলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সেবা প্রত্যাশী আমার একজন ঘনিষ্টজনের আত্মীয় বলে ১০ হাজার টাকা রেখেছি, অন্যতায় আমি ১৫ হাজার টাকা ছাড়া নামজারী করি না (সরকারী বিধি অনুযায়ী নামজারি ফি ১১শত ৫০ টাকা)। উল্লেখ্য তহশিলদারের ঘুষ নেওয়ার অডিও রেকর্ড প্রতিনিধির কাছে সংরক্ষিত আছে।
অপরদিকে ছিলাপাঞ্জা গ্রামের ইসলাম উদ্দিন জাতুকর্ণ পাড়া মৌজার আর এস দাগ নং ৩৪৮ ও ৩৫৩ বাড়ী ও ডুবা, কৃষি রকম ভ‚মির খাজনা পরিশোধ করতে গেলে ১৯৭৯ বাংলা থেকে ১৪৩০ বাংলা পর্যন্ত ৪৫ বছরে কর আসে প্রায় ২০ হাজার টাকা। কিন্ত ঘুষের বিনিময়ে ১৪২৮ থেকে ১৪৩০ পর্যন্ত ফরম নং ১০৭৭ মোতাবেক মাত্র ৩ বছরের খাজনার রসিদে মাত্র ৫৫৫ টাকা আদায় করেন। ফলে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব গচ্ছা গেছে। এরকমভাবে খাজনা দিতে আসা লোকজনের কাছ থেকে ঘুষের বিনিময়ে নির্ধারিত হালসন অনুযায়ী কর না নিয়ে কম মেয়াদে খাজনা নিয়ে নিজের পকেট ভারী করে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন।
বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ মাহবুবুর রহমানের কাছে সবগুলো অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এসিল্যান্ড সাহেবকে বলে দিয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে তহশিলদার মোহাম্মদ রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!