প্রতিদিনের খাবারে সঠিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বয়স, শারীরিক অবস্থা ও দৈনিক শারীরিক কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে। একটি পরিবারে যেহেতু সদস্যদের বয়সের পার্থক্য থাকে, তাই সবার জন্য একরকম পুষ্টির চাহিদা নির্ধারণ করা কঠিন। তবে কিছু সাধারণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যেগুলো প্রতিদিনের খাবারে অন্তর্ভুক্ত করলেই সবাই সঠিক পুষ্টি পেতে পারে।
প্রথমত, শরীরের জন্য শর্করা (কার্বোহাইড্রেট) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সাধারণত চাল, আটা ও অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবার থেকে পাওয়া যায়। এরপর প্রয়োজন প্রোটিন, যা প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ উভয় ধরনের হতে পারে। প্রাণিজ প্রোটিন যেমন ডিম, দুধ, মাছ ও মাংসে পাওয়া যায়, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন পাওয়ার জন্য ডাল, ছোলা, বাদাম খাওয়া যেতে পারে। তবে, কম খরচে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনও শরীরের প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো চর্বি (ফ্যাট), যা প্রতিদিনের তেলের মাধ্যমে শরীরে প্রবাহিত হয়। ভিটামিন ও মিনারেলসও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। শাক-সবজি, ফলমূল ও সালাদ থেকে এসব উপাদান সহজেই পাওয়া যায়। এসব উপাদান শরীরে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে হজম প্রক্রিয়া এবং পুষ্টির শোষণ নিশ্চিত করতে।
তবে, খরচ কমানোর জন্য কিছু কৌশলও অবলম্বন করা যেতে পারে। একসঙ্গে কয়েকদিনের খাবার একবারে রান্না করলে যেমন সময় ও খরচ সাশ্রয় হয়, তেমনি একাধিক পদ রান্না করার পরিবর্তে দুটি পদ কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। মাছ বা মাংসের পরিবর্তে ডিমসহ আরও নানা উপাদান ব্যবহার করেও পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়। এমনকি, শাকসবজি, সালাদ, বা দেশি মৌসুমি ফল যেমন কলা, পেয়ারা দিয়ে খাবারের পুষ্টি বাড়ানো সম্ভব।
এছাড়াও, রান্নার পর খাবার ফ্রিজে রেখে পরবর্তীতে সেগুলো খাওয়া যেতে পারে, যাতে সময় ও খরচ কমে। তবে, খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যেন পুষ্টির মান ঠিক থাকে।
পুষ্টিবিদদের মতে, সঠিক পুষ্টির জন্য প্রতি বেলা তিনটি প্রধান খাবারের সঙ্গে ছোটখাটো নাশতা যেমন কলা, পেয়ারা, সেদ্ধ ছোলা বা এক গ্লাস দুধও প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি, বাড়ন্ত বয়সের শিশুদের জন্য বিশেষ খাবারের প্রয়োজন রয়েছে, যা তাদের শারীরিক ও মেধাগত বিকাশে সহায়তা করবে।
বাজার করতে গিয়ে খরচ কমানোর জন্য সপ্তাহে একবার বাজারের পরিকল্পনা করা উচিত। কিছু উপকরণ যেমন চাল, আটা, ডাল, ডিম ইত্যাদি একবারে কিনে রাখা যেতে পারে। মাছ ও মাংসের জন্যও প্রয়োজনীয় পরিমাণেই কিনলে খরচ কমবে এবং সাশ্রয়ী হবে।
এক সপ্তাহের খাবারের পরিকল্পনা নিচে দেওয়া হল, যা পুষ্টি ও সাশ্রয় নিশ্চিত করতে সহায়ক:
শনিবার: ভাত, ভর্তা (আলু, বেগুন, কচু) ও মাছের ঝোল।
রোববার: ভাত, কলমিশাক ভাজি, কাঁচকলা দিয়ে কই মাছের ঝোল।
সোমবার: ভাত বা রুটি, মুরগি দিয়ে আলুর ঝোল।
মঙ্গলবার: ভাত, লালশাক ভাজি, পাঙাশ মাছ।
বুধবার: ভাত, কচুরমুখি ভর্তা, মাছভাজা ও ডাল।
বৃহস্পতিবার: ভাত, আলু–করলা ভাজি, পাবদা মাছ।
শুক্রবার: খিচুড়ি, পটোলভাজা, মুরগি বা গরু।
এছাড়া, খাবারের সাথে ভিটামিন সি যুক্ত উপকরণ যেমন লেবু, কাঁচা মরিচ বা ধনে পাতা রাখলে পুষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে।
আপনার পরিবারে খাবারের পরিকল্পনা করলে শুধু খরচ কমানো যাবে না, বরং শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিও নিশ্চিত হবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!