বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি রতন টাটা আর নেই। ভারতের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড টাটা গ্রুপের প্রধান এই বিখ্যাত ব্যবসায়ী গত সোমবার অসুস্থ হয়ে মুম্বাইয়ের ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে বুধবার রাতে ৮৬ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
ভারতের ঐতিহ্যবাহী টাটা গ্রুপের উন্নতির জন্য রতন টাটার অবদান অপরিসীম। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের আয় ৪০ গুণ বেড়ে যায়। তাঁর সময়ে গ্রুপটির আধুনিকীকরণ এবং বিশ্ববাজারে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ ছিল টাটা গ্রুপের অন্যতম মাইলফলক। রতন টাটার সাফল্যের এই যাত্রা শুধু ব্যবসা নয়, বরং ভারতের ব্র্যান্ডিংকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
রতন টাটার জীবন ছিল একাধারে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত সংগ্রামের মিশেল। তিনি তাঁর বাবা নাভাল টাটার পরিবারে দত্তক সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠেন। তবে মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ তাঁকে মানসিকভাবে ব্যাপক প্রভাবিত করেছিল। ছোটবেলায় যে মানসিক কষ্টের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, তা তাঁর জীবনের অনেক সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছিল।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল একাধিক সম্পর্ক, কিন্তু কোনো দিন বিয়ে করেননি। অনেকেই বিশ্বাস করেন, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদই রতন টাটার মধ্যে বিয়ের প্রতি ভয় সৃষ্টি করেছিল। তবে রতন টাটা ছিলেন এককভাবে সফল, দয়ালু এবং মানবিক। তিনি কুকুরের প্রতি গভীর ভালোবাসা দেখাতেন এবং টাটা গ্রুপের সদর দপ্তরে কুকুরদের জন্য আলাদা ঘরও ছিল।
রতন টাটার সবচেয়ে বড় পরিচিতি ছিল তাঁর দানশীলতা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ৮ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৪ কোটি রুপি দান করেছেন। মহামারিকালে তাঁর দানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি রুপি ছিল, যা ভারতের বিভিন্ন সংকটময় সময়ে সহায়ক হয়ে উঠেছিল।
রোববার রাতের এই দুঃখজনক খবর ভারতসহ পুরো পৃথিবীকে শোকের মধ্যে ডুবিয়েছে। রতন টাটা ছিলেন শুধু এক সফল ব্যবসায়ী নয়, তিনি ভারতের মানবিকতার প্রতীক হিসেবেও চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!