বরগুনা সদর উপজেলায় কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিখা/কাবিটা) ১৩ টি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার রাজু আহম্মেদ বরগুনার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাজে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে বরগুনা সদরের ৫ টি ইউনিয়নে কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ১৩ টি প্রকল্পে ৫ কোটি ৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়। এসকল প্রকল্পে শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই। মেশিন দিয়ে সস্তায় মাটি কাটার বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীন দরিদ্র জনগনের আয় বৃদ্ধি, দেশের সর্বত্র খাদ্য সরবরাহের ভারসাম্য আনয়ন এবং দারিদ্রমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি কর্মসূচি ব্যাহত হয়েছে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এসব প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারি এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা।
বরাদ্দপত্রের শর্তাবলীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ জারীকৃত গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার কাবিখা/কাবিটা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা-২০২১ অনুসারে প্রাক্কলন প্রস্তুতসহ অন্যান্য অনুচ্ছেদ এবং সকল বিধি বিধান/পদ্ধতি অনুসরন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। কাবিখা/কাবিটা কর্মসূচি ২০২১ এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যকে অবশ্যই ইউনিয়নের অধিবাসী হতে হবে, এবং প্রত্যেক কমিটিতে অন্তত একজন মহিলা সদস্য থাকবেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বারগনের মধ্য হতে প্রকল্প চেয়ারম্যান মনোনীত হবেন। তবে, কোন কারনে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান মেম্বার অনুপস্থিত থাকলে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অন্য কোন মেম্বারকে প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসাবে মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে। পরিপত্রে এমন নির্দেশনা থাকা সত্বেও সেই পরিপত্রকে অনুসরন না করে ভুয়া প্রকল্প কমিটি সাজিয়ে ইতোমধ্যে সাড়ে ৩ কোটি টাকার বিল তুলে নিয়েছেন প্রকল্প কমিটির সদস্যরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদরের ১৩ টি প্রকল্পের প্রায় সবগুলোই প্রকল্প কমিটি শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে এস্কেভেটর (স্থানীয়ভাবে ভেকু নামে পরিচিত) মেশিন দিয়ে মাটির কাঁচা রাস্তা সংস্কার কাজ করেছেন। এছাড়া মানুষের ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হয়েছে রাস্তা মেরামতে। এতে দরিদ্র শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব অনিয়মের সবই হয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চোখের সামনে।
রায়ভোগ এলাকার কৃষক জাফর খাঁন বলেন, শ্রমিক দিয়ে কাজ করলে গাছপালা ও ফসলী জমি নষ্ট হতোনা। ভেকু দিয়ে কাজ করার ফলে আমরা ৫ বছরে ওই জমিতে আর ফসল দিতে পারবোনা।
ইউপি চেয়ারম্যান/মেম্বার ব্যতীত কিভাবে প্রকল্প কমিটি অনুমোদন দিলেন? জানতে চাইলে, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, এটি বিশেষ প্রকল্প। যদি সাধারণ বরাদ্দ হতো তাহলে অনেক বাধ্যবাধকতা থাকতো। বিশেষ প্রকল্পে এমপি যাকে মনোনীত করবে সেই কমিটির চেয়ারম্যান হতে পারবে। ভেকু দিয়ে প্রকল্পের কাজ হয়েছে তিনি তা স্বীকার করেন। মাষ্টাররোল কি ভেকুতে দিতে পারবে? এর উত্তরে তিনি বলেন, না তা দিতে পারবেনা। এ পর্যন্ত ১৩ টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ কোটি টাকা বিল প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম মিঞা বলেন, ১৩ টি প্রকল্পের কমিটিতে যে অনিয়ম আছে, বাস্তবায়ন নীতিমালা অনুযায়ী কমিটিতে নারী সদস্য দেয়া হবে এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারকে যাতে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয় তার নির্দেশনা থাকবে। বর্ষা মৌসূমে কিছু প্রকল্পে এস্কেভেটর দিয়ে কাজ হয়েছে তবে, পরবর্তী কাজ সম্পন্নের জন্য শ্রমিক নিয়োগ ব্যাতীত এবং প্রকল্পের যে এস্টিমেশন দেয়া আছে তা শতভাগ না হলে বিল প্রদান করা হবেনা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!