ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ হয়েছে। বৈঠক শেষে কোনো যৌথ সংবাদ সম্মেলন ছাড়াই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন জেলেনস্কি, যা দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কে টানাপোড়েন
বৈঠকের আগে থেকেই দুই নেতার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। ট্রাম্প প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে অভিহিত করেন এবং ইউক্রেনের যুদ্ধকে ‘একটি মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত’ বলে মন্তব্য করেন। বাইডেন প্রশাসনের তিন বছরের সম্পর্কের ওপর যেন বিনাশঙ্কার মেঘ জমে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন কৌশল ইউক্রেনকে চাপে ফেলছে এবং রাশিয়াকে বড় ধরনের ছাড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর ফলে শুধু ইউক্রেনই নয়, ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ন্যাটোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ
১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ঘোষণা করেছিলেন, ন্যাটোর কোনো সদস্যদেশের ওপর হামলা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান অবস্থান সেই ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির বিপরীত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে ট্রাম্পের আগ্রহের কারণে ইউক্রেনসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে।
উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও বৈঠকের নাটকীয় সমাপ্তি
ওভাল অফিসের বৈঠকটি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের হস্তক্ষেপের পর। তিনি জেলেনস্কির প্রতি অভিযোগ তুলে বলেন, “আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না।” ট্রাম্পও এতে সম্মতি জানান।
জেলেনস্কি ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করতে অস্বীকৃতি জানান, যা ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এতে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয় এবং জেলেনস্কি দ্রুত হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ হলে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক ছিল হয় জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করার একটি কৌশল, নয়তো ইউক্রেনকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন করে ফেলার রাজনৈতিক চাল। ট্রাম্প যদি ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করেন, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে কিনা, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনবাসী মনে করছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো চুক্তির আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রয়োজন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান অবস্থান ইউক্রেনের সেই চাওয়ার বিপরীত।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!