ধাতু: ক্ষয় রোগ হলে, জৈব তরল পদার্থ বের হওয়ার কুফলে; শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিগুলো নষ্ট হয়ে রক্তস্রাব হলে; অতিরিক্ত মশলাযুক্ত আহার; অধিক রাত্রিতে আহার; আগুনের তাপের কুফল। ময়দার দোকানে এবং মিষ্টির দোকানে যারা কাজ করে তাদের কোন কর্মবিমুখ, মোটা, অলস এবং তার প্রতিটি রোগই ক্রণিক আকার ধারণ করে। রক্ত, ধমনীসমুহের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে, পরে নীলবর্ণ প্রাপ্তি, শীতলতা এবং কালশিরা পড়া লক্ষণ উপস্থিত হয়। দেহ নীলবর্ণ ও বরফের মত শীতল হয়। জীবাণুসমুহ এই নির্জীব রক্তস্রোত, বংশ বৃদ্ধির উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র লাভ করে। রক্তদুষ্টি ও সান্নিপাতিক অবস্থা উৎপন্ন করে। (ডাঃ বোরিক)।
কারণ: আগে কোন রোগ হতে দুর্বলতা যারা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠিতে পারে নাই তাহাদের ক্ষেত্রে। রক্তক্ষরণ, শক, সার্জারী। ছোট বেলায় হাম, বা হুপিং কাশির পর থেকে হাঁপানী রোগে ভূগছে, মদ পান করে হজমের গোলমালে ভুগছে, বহুদিন পূর্বে আঘাত লেগে তার কুফল ভুগছে ও টাইফয়েড জ্বরের কুফল হতে পুরোপুরি সেরে উঠেনি। কুইনাইনের কুফল বা সবিরাম জ¦র কুইনাইন খেয়ে চাপা দেয়ার ফলে যেকোন রোগ হলে- পারদ সেবন, লবণ মিশানো মাছ, মাংস, পঁচা, ভাসি খাদ্য, চর্বিযুক্ত খাদ্য, রোদ ভোগের কুফলে, অতিরিক্ত খাদ্য খেয়ে রোগ হলে, ফ্রিজে রক্ষিত খাদ্য বা বরফ মিশ্রিত খাদ্য খেয়ে রোগে, দিনের পর দিন গুরুপাক দ্রব্য খেয়ে হজম শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে।
ব্যক্তিভিত্তিক লক্ষণ:
- কার্বো ভেজের রোগ বিকাশতত্ত্ব পরীক্ষাকালে মন্থরতা, আলস্য, শিরাস্ফীতি; এইসব শব্দ প্রায়ই তোমাদের মনে উদিত হইবে। এই শব্দগুলো এই ওষুধের লক্ষণ তত্ত্বে প্রায়ই থাকে। দেহযন্ত্রের সব কিছুই ধীর গতি বিশিষ্ট, স্ফীতি, প্রসারিত ও ফাঁপিয়া উঠার ন্যায়। (ডাঃ কেন্ট)
- এই ওষুধের সর্বত্রেই জ্বালা; শিরায় জ্বালা, কৈশিকাগুলোতে জ্বালা, মস্তকে জ্বালা, চর্মে চুলকায় ও জ্বালা, প্রদাহিত অঙ্গে জ্বালা। ভিতরে জ্বালা ও বাইরে শীতলতা; ক্ষীণ রক্তসঞ্চালন ও দুর্বল হৃদপিন্ডের সাথে শীতলতা, ঠান্ডা নিশ্বাস, ঠান্ডা জিহ্বা, ঠান্ডা মুখমন্ডলের সাথে হিমাঙ্গতা; মৃতের মত দেখায়; শীতলতার সকল অবস্থাতে রোগী পাখার বাতাস চায় -(ডাঃ কেন্ট)। অক্সিজেনের প্রবল আকাঙ্খা; অঙ্গারক শূণ্য; আমাকে পাখার বাতাস কর, জোরে পাখার বাতাস কর বলিয়া চিৎকার করে।-(ডাঃ ন্যাস)।
- জলন্ত অঙ্গারকে জ¦লন্ত অবস্থাতে রাখতে হলে দূর থেকে হালকা ভাবে বাতাস করার দরকার হয় ঠিক তেমনই কার্বো ভেজের রোগীরও প্রশান্তি পাবার জন্য দূর থেকে বাতাস পছন্দ করে। কয়লার আগুন সবসময় উর্দ্ধমুখী, কার্বো ভেজের পেটের গ্যাস, বায়ূ উর্ধ্বমূখী।
- কাঠকয়লার আগুন নিভে এলে কী করেন? নিশ্চয় জোরে জোরে বাতাস করেন। আমাদের কাঠকয়লার কার্বোভেজও তাই। বাঁচার তাগিদে জোরে জোরে বাতাস চায়।
- এই ওষুধের সর্বত্র রক্তপাত আছে। প্রদাহিত স্থান হতে রক্তক্ষরণ, ক্ষত হতে রক্তক্ষরণ। ফুসফুস, জরায়ু, মূত্রথলী হতে রক্তপাত। রক্তবমন, অল্প রক্তপাত, দুর্বল রক্তসঞ্চালন হেতু কৈশিকা সকলের রক্তক্ষরণ আরম্ভ হয় এবং চলিতে থাকে -(ডাঃ কেন্ট)। এর রক্তস্রাব হয় কৈশিকাগুলি হইতে চুইয়ে পড়া প্রকৃতির।
- শিরাগুলির শিথিলতা, টিস্যুসমুহের দুর্বলতা, ক্ষত মেরামত না হওয়ার প্রবণতা, আঘাতপ্রাপ্ত স্থান শুকাবার কোন লক্ষণ থাকে না। শিথিল ও দুর্বল অবস্থার জন্য সর্বত্র ক্ষত জন্মে। দুর্বল টিস্যু নির্মাণ অথবা আগে টিস্যু নির্মাণ হয়না। সামান্য প্রদাহ বা রক্তসঞ্চয় যুক্ত স্থান কালো বা বেগুনী বর্ণ ধারণ করে এবং সহজেই পঁচা ভাব ধারণ করে। এটি রক্তদুষ্টি অবস্থার বিশেষত অস্ত্রোপচারের পর ও আঘাতের পর রক্তদুষ্টির পক্ষে একটি অপূর্ব ওষুধ। -(ডাঃ কেন্ট)।
- কার্বো ভেজে ঔদাসীন্য একটি প্রধান লক্ষণ; কোন কিছুতেই উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে না, সবকিছুতেই নিস্তেজ ভাব বা অনুভব শক্তির অভাব বা অক্ষমতা, আনন্দ বা নিরানন্দ অনুভব না করে সবকিছুই শোনে এবং ঐ বিষয়ে কিছুই চিন্তা করেনা।
- বিদ্যালয়ের বালক বালিকারাও মন্থর, তারা ধীরে লেখাপড়া শেখে। রাত্রিকালীন ভয়ে কষ্ট পায়, একাকী শুইতে পারেনা, কেহ সাথে না থাকলে অন্ধকার ঘরে যেতে পারে না।
- ভারী জিনিসের চাপের মত বোধ মাথায়, চক্ষুতে, চক্ষুর পাতায়, কানে, পেটে, এমনকি দেহের সর্বত্র।-ডাঃ বোরিক
- উদরাময়ের সাথে পেট ফাঁপা, ঢেকুরে উপশম।
- দুধ, মাংস ও চর্বিযুক্ত খাদ্য সহ্য হয়না। লঘু পথ্যতেও অসুখ হয়, পেটের উপরাংশ স্পর্শ করা যায়না। টক, লবণ, মিষ্টি ও কফি খেতে ভালোবাসে। যাহা খেলে সহ্য হয়না তাহাই খেতে চায়।
- কার্বো ভেজ উভয় কাতর। গোছলে অনিচ্ছা।
- হুপিং কাশি ও বৃদ্ধদের হাঁপানি। এই দুইটি ক্ষেত্রেও কার্বোভেজ যথেষ্ট ভালো কাজ করে।
- অনবরত পঁচা দূর্গন্ধ বাহ্যে অসাড়ে নির্গমন। পরে মলদ্বারে জ্বালা, নরম বাহ্যেও অতিকষ্টে নির্গত হয়।
- বৃদ্ধদের বদহজম রোগে অনবদ্য।
- গর্ভস্রাবের পর বা প্রসবের পর ফুল আটকাইয়া বা ফুলের ছিন্ন অংশ সম্পূর্ণ নির্গত না হইয়া দীর্ঘদিন ধরিয়া অল্প অল্প রক্তস্রাব চলিতে থাকিলে বা প্রসবান্তিক ক্লেদস্রাব দীর্ঘ দিন ধরিয়া চলিতে থাকিলে।
- গর্ভবতী মা ও সন্তানের জন্য কার্বোভেজ পরম বন্ধু। যে সকল ঔষধ স্ত্রীলোককে সুপ্রসবের জন্য উপযুক্তভাবে তৈরি করতে পারে, কার্বোভেজ তাদের অন্যতম। গর্ভাবস্থায় বমি, বমিভাব, উদরে বায়ু সঞ্চয় ও উদরস্ফীতি, শিরাস্ফীতি ও অলসভাব, দুর্বলতা ও শিথিলতা, দেহ ভারী বোধ ও ক্লান্ত, বাতাস গ্রহণের ইচ্ছা ইত্যাদি লক্ষণগুলো লক্ষণগুলো প্রায় সব গর্ভিনীর মধ্যেই বিদ্যমান থাকে। উক্ত লক্ষণগুলো কার্বোভেজ পরীক্ষাকারীর মধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে বিকাশপ্রাপ্ত হয়েছিল। তাই স্ত্রীলোকের গর্ভকালীন ঔষধ হিসেবে কার্বোভেজ একটি অতি মূল্যবান ঔষধ।
গর্ভকালই স্ত্রীলোকদের হোমিও চিকিৎসার উপযুক্ত সময়। কারণ গর্ভকালে সুপ্ত মায়াজমসমুহ জাগ্রত হয়ে গর্ভিনীর নানা প্রকার বিশৃংখলাজ্ঞাপক লক্ষণসমুহ প্রকাশ করে। ঐ সময় যদি গর্ভিনীর লক্ষণানুসারে মায়াজমেটিক ঔষধ প্রয়োগ করা হয় তা হলে গর্ভিনীর কেবল তৎকালীন লক্ষণগুলো দূর হয়ে তাকে সুপ্রসবের জন্য প্রস্তুত করে তুলবে না- তার শরীর বিধানের বহু রোগজ বিশৃংখলাও দূর করবে ও তিনি বাকি জীবন বহুবিধ যন্ত্রণা হতে মুক্ত থাকবেন এবং ঐ গর্ভিনী পৃথিবীতে নিরোগ, বলবান, ন্যায়বান ও সত্যবাদী শিশুর জন্ম দিবেন। এটা মহাত্মা হানেমানের মায়াজম তত্ত্বের স্থির সিদ্ধান্ত।
- কোন গর্ভবতী স্ত্রীলোকের যদি কাশি থাকে ও প্রায়ই সন্ধ্যার দিকে বা রাতে জ¦র আসে এবং বাতাস গ্রহণের যথেষ্ট ইচ্ছা থাকে- তা হলে কার্বোভেজ কাশি ও জ¦র দু’টিই সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য করার ক্ষমতা রাখে।
- জটিল কিডনী সংক্রান্ত রোগে, যক্ষা রোগে- যদি রোগীর শ্বাসকষ্ট সহ বাতাস গ্রহণ করার যথেষ্ট আকাঙ্খা থাকে তা হলে কার্বোভেজ রোগীর সাংঘাতিক লক্ষণগুলো নিবারণ করে আশ্চর্য উপশমদায়ক ঔষধ হিসেবে কাজ করার অসাধারণ ক্ষমতা রাখে।
বিজ্ঞ ডাক্তারদের অভিমত:
- ডা. কেন্ট বলেন- জরায়ু থেকে ঘোর লাল বর্ণ চুইয়ে পড়া (সামান্য রক্তস্রাব চুইয়ে পড়া)।
- ডা. ই বি ন্যাশ বলেন- প্রবল অম্লত্ব এবং জল উদগার, নির্দোষ খাদ্যও অসহ্য বিশেষতঃ চর্বিযুক্ত খাদ্য। এ ক্ষেত্রে পালসেটিলা বিফল হলে কার্বোভেজিটেলিস সফল হয়।
- ডা. কাউপারথয়েট বলেন- নাক্স যেখানে সুফল দিতে পারে না কার্বোভেজ সেখানে পরিপাক তন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার উপর চমৎকার কাজ করে।
- ডা. এলেন বলেন- যে রোগের শেষ অবস্থায় (অর্থাৎ রোগীর প্রায় অন্তিম কাল) যখন প্রচুর ঠান্ডা ঘাম হতে থাকে প্রশ্বাস বায়ু ও জিহ্বা ঠান্ডা হয়, গলার স্বর হারিয়ে ফেলে তখনও একমাত্র কার্বোভেজই জীবন রক্ষা করতে পারে।
স্বাতন্ত্র্য অবস্থা:
- শীতল অবস্থায় মুখের উপর পাখার বাতাস চায়।
- স্বাস্থ্যহানির অতীত কাহিনী।
- বিভিন্ন খানা খেয়ে অসুস্থতা।
চিত্র: জীবনীশক্তি প্রায় নিঃশেষিত, শরীর ঠান্ডা; বিশেষতঃ হাঁটু হইতে পায়ের তালু পর্যন্ত, স্থিরভাবে পড়িয়া থাকে যেন মৃত প্রায়, নিশ্বাস শীতল, শরীরে ঠান্ডা ঘাম, পাখার বাতাস চায়।
নোট: অসমলক্ষণে বা এলোপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা নিউমোনিয়া চিকিৎসা হওয়ার পর রোগীর বুকে একটা অস্বস্তি বোধ থেকে যায়। এক্ষেত্রে কোন লক্ষণ পাওয়া না গেলে রোগীর যদি সাইকোটিকের প্রাধান্য থাকে সেক্ষেত্রে মেডো অন্যথায় কার্বোভেজ এর উত্তম ঔষধ।
বৃদ্ধি: মাখন, চর্বিযুক্ত খাদ্য, পঁচা মাছ, কুইনাইন ও পারদের অপব্যবহারে, জলীয় বায়ুতে, দুধ, কফি ও মদপানে।
হ্রাস: ঢেকুরে, পাখার বাতাসে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!