ঝিনুকের খোসার তিনটি স্তরের মধ্যবর্তী স্তর হইতে প্রস্তুত।
প্রুভার:- মহাত্মা হানেমান সহ মোট ২৬ জন প্রুভার প্রুভিং করেন।
গঠন:- গৌরবর্ণ, বেশ মোটাসোটা, নাদুস নুদুস, থপথপে চেহারা, হাড়গুলি বেশ শক্ত নয়, মাংস বেশী, মোটা হইবার ধাতু, মাথা ও পেট বড়, ঘাড় চিকন। আবার শীর্ণকায় লোকও ক্যালকেরিয়াতে আছে তবে তাদের মাথাটি বড়, পেটটি ঘটির মত থাকেই থাকে।
কারণ:- ঠান্ডা স্যাঁৎসেতে স্থানে দাড়াইয়া থাকার ফলে বা ঠান্ডা পানিতে দাঁড়াইয়া কাজ করার ফলে, যারা ঠান্ডা কাদা লইয়া কাজ করে তাদের প্র¯্রাব না হলে। অতিরিক্ত পরিশ্রম, উদ্বেগ, ভয়, অপুষ্টি, এলকোহল, বার্ধক্য। তরল পদার্থের ক্ষয় হেতু। ঘাম, উদ্ভেদ অথবা মাসিক ¯্রাব চাপা দেওয়ার হেতু। চাপ, ভার বহন উত্তেজিত হইবার ফলে কোন রোগ দেখা দিলে ক্যালকেরিয়া তাতে উপযোগী।
মানসিক লক্ষণ:- ক্যালকেরিয়ার রোগী ভীতু, অনেক রকমের ভয় প্রকাশের মাধ্যমে সে রক্ষা পেতে চায়, নিজেকে রক্ষা করার জন্য সে তার চারদিকে অনেক মানুষ রাখে। ক্যালকেরিয়া কার্বনিকা মানুষেরা খুব একটা বাহিরে বের হয় না, জীবনে কোন দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিতে চায় না, এরা বরং নিজের বন্ধু এবং অংশীদার হিসেবে এমন সব মানুষকে বেছে নেয় যাদের উপর সে নির্ভর করিতে পারে, যাহারা সুরক্ষক। একজন ক্যালকেরিয়া কার্বের রোগী অন্য একজনকে সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্বাস করে, যারা সাধারণতঃ চিকিৎসা নিবার জন্য বাবা মাকে সঙ্গে নিয়ে আসে। সরাসরি কখনই প্রশ্নের উত্তর দেয় না, উত্তরগুলো তাদের অভিভাবকদের কাছে ফিসফিস করে বলে, এমনকি একজন সামর্থ্য ক্যালকেরিয়া কার্বও সাধারণতঃ আত্মীয়-স্বজন সাথে নিয়ে আসে।
তারা যেভাবে বর্ণনাগুলো দেয়- আমার আশেপাশে যখন সবাই থাকে তখন আমি সুখী। এতে বোঝা যায় তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আশেপাশে লোক থাকা প্রয়োজন।
ক্যালকেরিয়ার শিশুরা খুব জেদি হইতে পারে এমনকি আক্রমণাত্মকও হইতে পারে, তবে এই আচরণগুলো শুধু নিজের বাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বিশেষ করে মা-বাবার সাথে। বাহিরে তারা যথেষ্ট লাজুক, ভীতু, ভদ্র ব্যবহার করে। রূঢ় ব্যবহার এবং তিরস্কারের প্রতি সংবেদনশীল, নিষ্ঠুরতার কোন ঘটনা শুনে বা দেখে ক্যালকেরিয়া উদ্বিগ্ন হয়।
। টেলিভিশনে দুর্ধর্ষ বা ভৌতিক দৃশ্য দেখে ক্যালকেরিয়া শিশুরা হয় রুম থেকে চলে যাবে বা চোখ বন্ধ করে রাখবে। এদের মধ্যে রোগ যন্ত্রণার তীব্র ভয়, চিকিৎসককে ভয় বিশেষ করে দাঁতের ডাক্তারের প্রতি, ইনজেকশনে ও অপারেশনের ভয়, বড় হইবার পরেও এদের মধ্যে এই ভয় পাওয়া যায়।
১৯৭৬ সালে এথেন্সে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন চলার সময় বিখ্যাত হোমিওপ্যাথ ডাঃ পাসেরো বলেন- মেটেরিয়া মেডিকার সবগুলো ভয় ক্যালকেরিয়া কার্বের মধ্যে আছে; যদি রোগীর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভয় থাকে তখন সম্ভবত ওষুধটি ক্যালকেরিয়া। যাই হোক, এইসব ভয়ের যে কোন একটির সাথে যদি এরকম একটা আচ্ছন্নকর ভয় থাকে যে- অন্যরা তার মানসিক অবস্থা বুঝে ফেলতে পারে, তবে তা একান্ত ভাবেই ক্যালকেরিয়া নির্দেশ করে, যদি রোগীর মধ্যে এই লক্ষণটি থাকে তবে তা যথেষ্ট শক্তিশালী কীনোট। এমনকি যদি সেইখানে অতিরিক্ত অন্য কোন ভয়ের লক্ষণ না থাকে বা শারীরিক ভাবে কোন রোগ লক্ষণ এবং কোন হ্রাস বৃদ্ধিও না থাকে তবু ক্যালকেরিয়া নির্দেশিত ওষুধ।
ব্যক্তিভিত্তিক লক্ষণ:-
1. মোটা, মেদপূর্ণ, থলথলে দেহ ও মাথার ঘাম এবং ডিম খাবার প্রবল ইচ্ছা সহ শীতকাতরÑ উক্ত চারটি লক্ষণ বর্তমান থাকিলে যে কোন রোগে ক্যালকেরিয়া কার্ব সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধ। তবে শীতকাতর সহ মোট তিনটি লক্ষণ থাকলেও ক্যালকেরিয়া কার্ব প্রয়োগ করা যায়।
2. ভীষণ শীতকাতুরে, ঠান্ডা বাতাসে, উন্মুক্ত বাতাসে, ঝড়ো হাওয়ায়, শীতল আবহাওয়ার আগমনে অনুভূতি প্রবণ। সময়ে সময়ে মস্তকে রক্তাধিক্য হয়, উহা স্পর্শেও উত্তপ্ত বোধ হয় কিন্তু অধিকাংশ সময়ই উহা তার নিকট ঠান্ডা বোধ হয়, মস্তক ত্বক স্পর্শে ঠান্ডা, সে প্রচুর বস্ত্র চায়, তার পায়ের পাতা দুটো ঠান্ডা থাকে, ঠান্ডায় স্পর্শকাতরতা ও দুর্বলতা এই ওষুধের সব অবস্থায় দেখা যায়। দেহের এক অংশে শীতলতার অনুভূতি এবং সর্বাঙ্গীণ শীতলতার অনুভূতি সব সময়েই ক্যালকেরিয়াকে মনে করিয়া দেয়। (ডা. ন্যাশ)
3. ক্যালকেরিয়ার এমন একটি লক্ষণ আছে যাহা কেবল অন্যান্য লক্ষণ অপেক্ষা প্রধান এরূপ নহে কিন্তু অন্যান্য ওষুধ অপেক্ষাও প্রধান। সেটি হল- বৃহৎ মস্তক বিশিষ্ট, খোলা ব্রহ্মরন্ধ্র, শিশুদের মাথার প্রভূত ঘর্ম, ঘর্ম এত প্রচুর যে- ঘুমের মধ্যে মাথা ও মুখমন্ডল দিয়া গড়াইয়া আসিয়া বালিশের অনেকখানি ভিজাইয়া দেয়- (ডা. ন্যাশ)। ঘুমের মধ্যে গলায় ঘাম। ক্যালকেরিয়ার রোগীর মাথায় বেশী ঘাম হয়, যার কারণে প্রায় সময় চুল ভিজা থাকে। আংশিক ঘর্ম, নিশা ঘর্মেরও একটি ওষুধ।
4. যে সকল শিশু বয়সের তুলনায় খুব মোটা-সোটা ও বর্দ্ধিত হয় এবং ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না- তাদের ক্ষেত্রে ক্যালকেরিয়া কার্যকরী ঔষধ। শিশু বা ছোট বালক বালিকাদের ক্ষেত্রে যদি ক্যালকেরিয়ার দৈহিক গঠন থাকে- তাহলে নিদ্রাকালে মাথার ঘামে বালিশ ভিজে যায়- শুধু এ লক্ষণের উপর নির্ভর করে এ ঔষধ প্রয়োগ করা যায়।
5. শিশু বা ছোট বালক-বালিকাদের ক্ষেত্রে ঔষধ নির্বাচনে ভুল করে ক্যালকেরিয়া কার্ব দুই বা তিন মাত্রা প্রয়োগ করা হলেও উপকার ছাড়া অপকার হবে না।
6. ক্যালকেরিয়ার সকল লক্ষণ শরীরের ডান দিকেই বেশী প্রকাশ পায়।
7. বালিকা হৃষ্টপুষ্ট, রক্তপ্রধান এবং অতি শীঘ্র শীঘ্র বেড়ে উঠে। ঋতু¯্রাব নিয়মিত সময়ের পূর্বে, অতি প্রচুর, অতিশয় দীর্ঘকাল স্থায়ী, পায়ের পাতা দুটি স্বভাবতই ঠান্ডা ও ভিজা থাকে- মনে হয় যেন রোগীনি ঠান্ডা ভিজা মোজা পরে আছে, শয্যায় শুইলে পদদ্বয় অবিরত ঠান্ডা বোধ হয়। সামান্য মাত্র মানসিক উত্তেজনায় প্রচুর পরিমানে ঋতু প্রবাহ প্রবর্তিত হয়।
8. ছোট ছোট বালিকাদের শে^ত প্রদরে ক্যালকেরিয়া কার্বের যথেষ্ট সুনাম আছে (কলোফাইলাম)।
9. ক্যালকেরিয়া কার্ব হচ্ছে এমন একজন মহিলার মত যে প্রথমে ছেলেবেলায় তার মা বাবা কর্তৃক সুরক্ষিত ছিল, তারপর তার স্বামীর দ্বারা। কোন প্রতিযোগীতার প্রয়োজনীয়তাই দেখা দেয় নি। আমি দেখেছি, মা বাবার ঘরে সুরক্ষার মধ্য দিয়ে লালিত মেয়েরা বিয়ে করতে ইতস্তত করে বা ভয় পায়, বিশ^াস করতে পারে না যে অন্য কোথাও গিয়ে এমন নিরাপত্তা সে পাবে। যতদিন সম্ভব, ততদিন এর বিয়ে করে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না বোঝে যে বাবা মা বুড়ো হয়ে আসছে, সারাজীবন তারা তাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। এই বোধটা এদের মধ্যে হঠাৎ করে আসে।
10. অস্থির; বিশেষতঃ শিরদাঁড়া দীর্ঘাস্থির বক্রতা, অস্থির কোমলতা প্রাপ্তি, ব্রহ্মরন্ধ্র অতিরিক্ত দীর্ঘকাল খোলা থাকে এবং মাথাটি খুব বড়- (ডা. ন্যাশ)।
11. পরিপাক পথ অম্ল (অম্ল আস্বাদ, অম্ল উদগার, অম্ল বমন, অম্ল গন্ধ বা জমাট দুধের ন্যায় উদরাময়)।
12. খোলা হাওয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা, অতি অল্প ঠান্ডা বাতাসও যেন দেহে বিঁধিতে থাকে।
13. যদিও মিষ্টি এবং লবণাক্ত দ্রব্য ও ভাতের পাতে অতিরিক্ত লবণ সে পছন্দ করে কিন্তু ডিমের মত প্রিয় বস্তু তার আর কিছুই নয় -(ডা. নরেন্দ্রনাথ)। আইসক্রিম, চকলেট, মাংস এবং মুরগী পছন্দ। নানা প্রকার অখাদ্য খাইতে চায়, হজম হয় না এমন বস্তু যেমন বালি, শ্লেট, পেন্সিল।
14. ভয়; মৃত্যুর, যক্ষ্মা রোগের, বিপদের, একা থাকিবার। নানারূপ ভয় বিশেষতঃ যখন ইচ্ছানুগ ¯œায়ুমন্ডলী বিকৃত হয়, সর্বপ্রকার শব্দেই সে চমকে উঠে।
15. সে ভয়ে পূর্ণ থাকে, জীবনে বিতৃষ্ণা, নিরাশা, উৎকন্ঠা, জগত অন্ধকার বোধ হয়। ভয় হয়- দুঃখজনক অথবা ভয়ংকর কিছু ঘটিবে। ভয় হয়- তার বিচার বুদ্ধি চলিয়া যাইবে অথবা লোকে তার মানসিক বিশৃংখলা লক্ষ্য করিবে।
16. যে সব পুরুষদের সঙ্গম ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সহজে লিঙ্গোদ্রেক হয় না ও রতিক্রিয়ার সময় অতি শীঘ্র রেতপাত হয় এবং প্রত্যেক বার যৌনক্রিয়ার পর সর্বাঙ্গীণ দুর্বলতা সহ মাথা ঘোরা, মাথা বেদনা, ঘাম ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা দেয়Ñ তাদের ক্ষেত্রে ক্যালকেরিয়া কার্ব একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ।
17. স্ত্রীলোকের নিয়মিত সময়ের অনেক পূর্বে অধিক পরিমাণে ও অধিক দিন স্থায়ী ঋতু¯্রাবসহ পায়ে ঠান্ডা বোধ থাকলে এবং প্রত্যেকবার যৌনক্রিয়ার পর সর্বাঙ্গীণ দুর্বলতা অনুভব হলে ক্যালকেরিয়া কার্ব বিশেষ কার্যকরী ওষুধ।
18. যে সকল বালিকাদের প্রথম ঋতু খুব অল্প বয়সে আরম্ভ হয় অর্থাৎ যে বয়সে ঋতু হওয়া উচিত-তার বহু পূর্বেই ঋতু দেখা দেয় এবং ঋতু¯্রাব পরিমাণে বেশি হয় ও বেশি দিন (৭/৮ দিন) থাকে, ক্যালকেরিয়া কার্ব তাদের পরম বান্ধবি।
19. ক্যালকেরিয়ার একটি বিশেষ অদ্ভূত লক্ষণ এই যে- অভ্যন্তরস্থ যন্ত্রগুলিতে যত বেশী সুস্পষ্ট রক্তসঞ্চয় হয় শরীরের উপরিভাগ ততই শীতল হয়। যক্ষ্মা রোগে, পাকস্থলী রোগে, আন্ত্রিক রোগে হাত-পা বরফের মত শীতল হয় এবং ঘর্মে আবৃত হয় এবং সে সময় সময় শরীরের অবশিষ্টাংশে ভার নিয়ে শুয়ে থাকে। মাথার ত্বক ঘামে ভিজিয়া যায়- এটি অদ্ভূত ব্যাপার (ডা. কেন্ট)।
20. শরীরের গভীর স্থানে ফোঁড়া জন্মে। ঘাড়ের গভীর স্থানে, উরুর গভীর স্থানে, উদরের মধ্যে ফোঁড়া জন্মে। এবং যদি বুঝা যায় যে ফোঁড়াটি এমন স্থানে হইয়াছে যেখানে তাহা ফাটিয়া পুঁজ-রক্ত নির্গত হইতে থাকিলে শরীরের রক্ত দূষিত হইবার সম্ভাবনা সেখানে ক্যালকেরিয়ার লক্ষণসমষ্টি বর্তমান থাকিলে ক্যালকেরিয়া প্রয়োগে ফোঁড়া আর পাকিতেই পারে না। অথবা যদি পাকিয়াও থাকে তাহা হইলে ক্যালকেরিয়া তাহার পুঁজ এমন ভাবে শোষণ করিয়া লয় যে শরীরের রক্ত বিষাক্ত হইবার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
21. বিশেষ করে তাদের পক্ষে ফলপ্রদ যারা রোগা ও ঘাড় কুঁজো/নত হয়ে হাঁটে ও বসে এবং দাঁড়িয়ে থাকলে খুব অস্বস্তি বোধ করে।
22. এই ওষুধের একটি বিশেষ প্রকৃতি- ইহার বহুপাদ-আর্বুদ উৎপাদনের প্রবণতা। নাকে, কানে, যোনীতে, মূত্রস্থলীতে ও যেখানে সেখানে বহুপাদ অর্বুদ জন্মে।
23. অতিরিক্ত পরিশ্রম হতে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি বোধ, সর্বপ্রকার পরিশ্রমে খারাপ বোধ করে।
24. কেলকেরিয়ার যে কোন মানসিক লক্ষণের মধ্যেই দুর্বলতা বিদ্যমান থাকে। তাই দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী কোন মানসিক শ্রম সে দিতে পারে না। মানসিক কাজ করতে গেলে সে মানসিক ভাবে শ্রান্ত, দৈহিক ভাবে শ্রান্ত হয় এবং ঘামিতে আরম্ভ করে, তার ফলে উত্তেজিত ক্রুব্ধ ও বিচলিত হয়ে পড়ে।
25. যেখানেই আমরা দেখি রোগীর দেহ অত্যন্ত স্থুল এবং থলথলে, মাথাটি প্রায় সর্বদাই স্বেদ সিক্ত, সেখানেই ডিমের প্রতি প্রবল ইচ্ছাও বর্তমান থাকে। এই তিনটি লক্ষণ বর্তমান থাকিলে সকল রোগেই কেলকেরিয়া কার্ব ব্যবহার করা যাইতে পারে। (ডা. নরেন্দ্রনাথ)
26. আঘাত লেগে আক্রান্ত স্থানে ব্যথা হলে প্রথমে আর্নিকা, এতে উপশম না হলে রাস-টক্স, তাতেও যদি ব্যথা থেকে যায় তবে ক্যালকেরিয়া কার্ব দিতে হবে।
ক্যালকেরিয়ার শিশু:- ক্যালকেরিয়া কার্বের প্রতিচ্ছবি একদম শিশুকাল থেকে সৃষ্টি হইতে থাকে, চলিতে থাকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত। আদর্শ ক্যালকেরিয়া শিশু চিত্র হচ্ছে সাদা ফর্সা, বেশি ওজনের এবং থলথলে শিশু, তার পেটটি উঁচু, থলথলে ভাবটি হচ্ছে এর মূল অবয়ব। এদের হাড়ে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়ামের অভাব এবং নরম। মাথার খুলির জোড়াটির স্থানে নরম বোধ হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে খোলা থাকে। কারণ ক্যালকেরিয়া পুষ্টি শোষণ এবং পরিপাকে বিভ্রাট সৃষ্টি করে, শিশু যদি অপুষ্টিতে ভোগে তখন তাদের মাথাটি বড় হইয়া যাইবার, পেটটি বিশাল হইবার এবং দেহ ক্রমশঃ শুকিয়ে যাইবার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। এ শিশুদের ত্বক ফ্যাকাশে কিন্তু লক্ষণ হইতেছে ঘাড়ের লিম্ফ- নোডগুলো ফুলে উঠে, শক্ত হয়।
দাঁত উঠিতে দেরি হওয়া:- ক্যালকেরিয়ার বৈশিষ্ট্য- দাঁত উঠিবার সময় শিশু দুর্বল এবং অবসন্ন হইয়া যায়, এবং ত্বকের বর্ণ অসুস্থ দেখায়, পরে ১২-১৭মাস বয়সে ক্যালসিয়াম ভারসাম্যের বিশৃংখলা হাঁড়ের মধ্যে ফুটে উঠে, হাঁড় হয়ে যায় নরম ভঙ্গুর- তা দৃঢ় হয় না- যথেষ্ট স্ফীতি হয় না, ফলে শিশু সঠিক সময়ে দাঁড়াতে পারে না, কাজেই হাঁটার সময় দুর্বলতা দেখা যায় বা দাঁড়ানোর সময় দুর্বলতা লক্ষণটি পাওয়া যায়। ক্যালকেরিয়া শিশুরা হাঁটতে দেরী করে।
ক্যালকেরিয়া শিশুদের একটি দৃষ্টি আকর্ষণীয় চরিত্রগত লক্ষণ হচ্ছে সব সময় আর্তনাদ করে, কান্না করে অথবা এমন ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে না জানি কি একটা ঘটেছে, আপাত দৃষ্টিতে এরকম করার বা এমন তেমন কোন সমস্যা রয়েছে বলে মনে হয় না। কখনো আশা করবেন না যে ক্যালকেরিয়া শিশুরা শীতল হবে। এ বয়সে এরা সাধারণত উষ্ণ এবং মাঝে মাঝে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাইবার প্রবণতাযুক্ত, এরা অস্থির প্রকৃতির এবং রাতে পায়ের আবরণ লাথি মারিয়া সরাইয়া দেয়, পালসেটিলা বা সালফারের মত। এরপর, বয়স যখন সাত- তখন থেকে এইসব শিশুর মধ্যে ক্যালকেরিয়ার চিরাচরিত শৈত্য ফুটে উঠতে থাকে।
শিশুদের মধ্যে মাথার খুলিতে ঘাম দেখা যায়, কখনো তা এত বেশি যে বালিশ ভিজাইয়া ফেলে, তাপমাত্রা যাহাই হোক না কেন- সবসময়ই এরকম ঘাম দেখা যায়। ক্যালকেরিয়া শিশুরা সহজেই এবং প্রচন্ড পরিমাণে ঘামে, ঘাড়ে এবং মাথার পিছন দিকে, বিশেষ করে বিছানায় থাকা কালে, ঘুমের প্রথম ভাগে। এদের পায়ের তলা ঠান্ডা এবং চটচটে। সাধারণতঃ ঘামে টক গন্ধ, একই রকম গন্ধ মলে। ক্যালকেরিয়া দুধ বমি করিতে পারে, প্রকৃত বমিও করে, এদের রুচি কমে যায় এবং খেতে চায় না।
দেহের জন্য যা প্রয়োজন তার চাহিদা বা বিতৃষ্ণা উৎপন্ন করার মত আশ্চর্য একটা ক্ষমতা শিশুদের দেহতন্ত্রে রয়েছে। প্রায় সব ক্যালকেরিয়া শিশুর মধ্যে সুনির্দিষ্ট ভাবে নরম সিদ্ধ ডিমের প্রতি তীব্র আকর্ষণ পাওয়া যায়। এমনকি তারা চাটতে বা গিলিতে শিখিবার আগেই। এখানে নরম সিদ্ধ ডিমের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে কারণ যদি শিশুদের শক্ত সিদ্ধ ডিমের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায় তবে তা ক্যালকেরিয়া না হইবার সম্ভাবনা বেশি। ক্যালসিয়াম বা পুষ্টি যা ডিম থেকে শোষণ করে নেওয়া দেহের জন্য প্রয়োজনীয়- ডিমকে অতিরিক্ত সিদ্ধ করিলে তা ধ্বংশ হইয়া যায়। এ ধরণের ছোট ছোট বিষয়ে বিস্তারিত দৃষ্টি দেবার কারণে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথ সাফল্যের অনেক উঁচু মাত্রায় স্থান পায়, যারা অনভিজ্ঞ এবং সব সময় ডিম পছন্দ করে শুনেই ক্যালকেরিয়া কার্ব দিয়ে দেয় তাদের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় সাফল্য লাভ করে। শক্ত সিদ্ধ ডিম পছন্দ করে এরকম দশটি শিশুর মধ্যে মাত্র একটি শিশু ক্যালকেরিয়া, অবশিষ্ট শিশুদের ওষুধ পালসেটিলা, কষ্টিকাম বা অন্য কিছু।
এসব শিশুদের মধ্যে মিষ্টির প্রতি তীব্র আকাংখা থাকে, বিশেষ করে চিনির প্রতি আকর্ষণ খুবই বেশি। চকলেটের প্রতি আকাংখা আছে তবে তা জমানো চিনির প্রতি আকর্ষণের মত এত তীব্র নয়। ডিম, আইসক্রিম, মিষ্টি, চকলেট, মাংস এবং মুরগী। যাহা হজম হয় না এমন বস্তু।
বিশেষ লক্ষণ:-
1. জ্বর; বেলা ২টায় শীত করে আসে, বেলা ১১টায় আসলে শীত থাকে না, জ্বর একদিন বেলা ১১টায়, পরদিন বেলা ৪টায় প্রকাশ পায়- আকর্ষণীয় লক্ষণ।
2. রোগী বেদনাযুক্ত স্থানে চাপিয়া থাকতেই ভালবাসে। -ব্রায়ো, পালস (বিরল লক্ষণ)
3. পূর্বাহ্ন ১১টায় পাকস্থলীতে শূণ্যতা ও দুর্বলতা বোধ- বিরল লক্ষণ।
4. জিহ্বা সাদা ঐ সঙ্গে ডগা ও ধারগুলো লাল।
কিছু ওরিয়েন্টেশন পয়েন্ট:-
1. ঠান্ডা এবং ভেজা আবহাওয়ায় সাধারণ বৃদ্ধি। রোগীরা শীতার্ত, শরীর গরম হইতে পারে না, বিশেষ করে তাদের পা খুব ঠান্ডা -তা গরম হইতে চায় না, সেই সাথে পায়ের তলায় সামান্য চটচটে ঘাম থাকিতে পারে, বিছানায় মোজা পরে শুইতে হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত পা গুলো গরম বোধ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ঘুম আসে না।
2. মোটা হইবার ও ওজন বাড়িবার প্রবণতা এবং ধীরগতির হইয়া যাইবার প্রবণতা।
3. ঘুমের সময় গলার চতুর্দিকে ঘাম।
4. লবন, টক, মিষ্টি এবং নরম সিদ্ধ ডিম এর প্রতি আগ্রহ। ঠান্ডা পানীয় ইত্যাদি পছন্দ।
5. উঁচু স্থানে গেলে মাথা ঘুরানি। মানসিক রোগ ভোগকালে আমরা দেখিতে পাই-
6. রোগীর মধ্যে অসংখ্য রকম ভয়, যেমন- অন্ধকারে ভয়, ভূতের ভয়, বজ্রপাতের ভয়, উঁচু স্থানে ভয়, ইঁদুরে ভয়, কুকুরে ভয়, সংক্রমনের ভয় ইত্যাদি।
7. পাগল হইয়া যাইবার সর্বব্যাপি একটি ভয়।
8. এমন একটা সুনির্দিষ্ট ভয় যে- অন্যেরা তার মানসিক বিভ্রান্তির কথা বুঝে যাবে।
9. আরোগ্যে হতাশা।
10. স্বাস্থ্য সম্পর্কে সারাক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখা উদ্বেগ, বিশেষ করে ক্যান্সার হইবার ভয়।
ঠান্ডা বাতাসে, ¯œানে, ভিজা আবহাওয়ায়, শীতল জলে স্নানে, প্রাতে এবং পূর্ণিমায়, সার্বিক বৃদ্ধি বিকেলে। মানসিক শ্রমে বৃদ্ধি। রোদ এবং দুধ মোটেও সহ্য করতে পারে না
উপশম:- শুষ্ক আবহাওয়ায়, বেদনান্বিত পার্শ্বে চাপিয়া শুইলে, নড়াচড়ায় এবং উত্তাপে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!