স্টাফ রিপোর্টার - ইমরান হক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর ২১ বছর পর আ.লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর শেখ হাসিনা ১৭ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তাহলে এখন কেন পালিয়ে গেছেন? কারণ একটাই যারা দুঃসময়ে আ.লীগ করেছিল, তাদের তিনি দলে রাখেননি।
তিনি ভাড়াটিয়া আ.লীগ, ব্যবসায়ী এবং হাইব্রিড নেতা বানিয়েছেন যাতে তারা লুটপাট করতে পারে। এখন তার সঙ্গে সেই হাইব্রিড নেতারাই পালিয়ে গেছেন, আর মাঠে পড়ে আছে নিরীহ নেতাকর্মীরা। তারা আজ মার খাচ্ছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে পৌর ও সদর উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আমরাও যদি ভাড়াটিয়া দিয়ে দল গঠন করি, তাহলে একদিন আমাদেরও একই পরিণতি হবে। শেখ হাসিনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
কাজেই জনগণের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক আছে, বিএনপি তাদেরকেই মনোনয়ন দেবে। আজ কিছু রাজনৈতিক দল ‘পিআর’ নামে একটি পদ্ধতি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই ‘পিআর’ কী? এটা মানুষ চেনে না, জানে না। এটা দিয়ে কি গোসল করে? না খায়? না দাঁড়িয়ে থাকে? সাধারণ মানুষ এটা বোঝে না। আমি যাকে নেতা বানাবো, তাকেই ভোট দেবো, তিনিই নির্বাচিত হবেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশেও পিআর পদ্ধতি অচল। এর মাধ্যমে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেশকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে পিআর পদ্ধতির কোনো স্থান নেই।
তিনি আরও বলেন, ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ, সেখানেও পিআর পদ্ধতি নেই। সেনাবাহিনী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রশাসন সবাই নির্বাচনের পক্ষে।
বাংলাদেশের জনগণও ভোটের পক্ষে। আমরা আশা করি, সরকার যে নির্বাচনের সময়সীমা দিয়েছে, তার অনুযায়ীই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা একটি রাজনৈতিক পথ তৈরি করেছি। এই সময়ে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। ২০ হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন, ২ হাজার গুম হয়েছেন। এমন কোনো নেতা নেই, যার নামে মামলা হয়নি। আমাদের অনেক নেতাকর্মী আত্মীয়ের জানাজায়, বোনের বিয়েতে অংশ নিতে পারেননি।
জাতীয় পার্টির অধীনে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জাতীয় পার্টির অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে, তারা জাতীয় বেইমান। অথচ দু’দিন পর তিনিই জাতীয় পার্টির অধীনে নির্বাচনে অংশ নেন। বেগম খালেদা জিয়া দেশকে ভালোবাসেন। বহুবার তাকে চাপ দেওয়া হয়েছিল দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, বিদেশে আমার কোনো ঠিকানা নেই, এ দেশই আমার ঠিকানা। তাই তিনি দেশ ছেড়ে যাননি। আজ বেগম খালেদা জিয়া দেশে আছেন, অথচ শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে বুলু বলেন, জাতির ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। তাকে আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি বলা হয়। তিনি তলাবিহীন ঝুড়ির দেশকে ১৯ দফার কর্মসূচির মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেন। শেখ হাসিনার উচিত ছিল জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কারণ, তিনিই আ.লীগকে পুনরুজ্জীবিত করে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে যখন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেন, বিনামূল্যে বই দেন, বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ দেন। নারী শিক্ষার জন্য কাজ করেন। তিনি তখন ‘ব্যাটার’ (অর্থাৎ মাইক্রোবাস বা যানবাহনের ব্যাটারি ব্যবহার) ব্যবস্থা চালু করেন। তিনি যদি তা না করতেন, তাহলে আজ সরকার কর্মচারীদের বেতন দিতে পারত না।
সম্মেলনে বরকত উল্লাহ বুলু পৌর ও সদর উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। পৌর বিএনপির নতুন কমিটি- সভাপতি: আক্তার হোসেন মাঝি, সিনিয়র সহ-সভাপতি: আফজাল হোসেন, সহ-সভাপতি: আসহান উল্যাহ সেন্টু, সাধারণ সম্পাদক: অ্যাড. হারুনুর রশীদ, যুগ্ম সম্পাদক: আব্দুল কাদির বেপারী, ইমান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক: শরীফ উদ্দিন পলাশ, শাহজালাল শেখ।
সদর উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি- সভাপতি: শাহজালাল মিশন, সিনিয়র সহ-সভাপতি: অ্যাড. জাকির হোসেন ফয়সাল, সহ-সভাপতি: আলমগীর আলম জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক: হযরত আলী ঢালী, যুগ্ম সম্পাদক: আক্তার হোসেন সাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক: অ্যাড. তোফাজ্জল হোসেন, অ্যাড. জসিম মেহেদী।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া, প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সলিম উল্যাহ সেলিম, কেন্দ্রীয় সদস্য মোশারফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান স্বপন, সাবেক আহ্বায়ক শফিউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আব্দুল হামিদ মাস্টার, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুবুর আনোয়ার বাবলু, সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন খান বাবুল, দেওয়ান মো. সফিকুজ্জামান, শরীফ মো. ইউনুছ, এম.এ. শুক্কুর পাটওয়ারী, ফেরদৌস আলম বাবু, ডিএম শাহজাহান, সেলিমুস সালাম, অ্যাড. জহির উদ্দিন বাবর, অ্যাড. মুনিরা চৌধুরী, মো. মোশারফ হোসাইন, আফজাল হোসেন, আক্তার হোসেন মাঝি, শাহজালাল মিশন, অ্যাড. হারুনুর রশীদ, হযরত আলী ঢালী, অ্যাড. জাকির হোসেন ফয়সাল, অ্যাড. তাফাজ্জল হোসেন, আক্তার হোসেন সাগর, অ্যাড. জসিম মেহেদী প্রমুখ।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!