মানিকগঞ্জে স্থানীয় কৃষকদের জমি দখল, অনিয়ম আর অসংগতি নিয়েই গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল অবকাশকেন্দ্র ‘ডেরা রিসোর্ট ও স্পা’। জমির মালিকদের অনেকেই এখনো তাদের প্রাপ্য টাকা পাননি। শুধু তাই নয়, রিসোর্টটির ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও শেষ হয়ে গেছে। অনুমোদনের সময় যে শর্তগুলো দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই মানা হচ্ছে না।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তদন্তে দেখা যায়, ২০১০-১১ সালে গরুর খামার করার নামে কৃষকদের কাছ থেকে জমি নেওয়া হলেও পরে ভয়ভীতি আর চাপে ফেলে তা দখল করে নেয় কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে তিন ফসলি জমি ভরাট করে নির্মাণ করা হয় এই রিসোর্ট। জমির মূল্য এখনো না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন একাধিক মালিক। উল্টো তাদের হয়রানি করতে মামলা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২২ সালের জুলাইয়ে উদ্বোধন হওয়া এই রিসোর্টে কটেজ, সুইমিং পুল, স্পা, রেস্তোরাঁ, খেলার মাঠসহ নানা আয়োজন রয়েছে। তবে জমি দখল ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এলাকাবাসী একাধিকবার জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের জুনে। অথচ নবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। একইভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ছাড়পত্রের শর্ত অনুযায়ী পয়ঃশোধন কেন্দ্র (এসটিপি) না থাকার পাশাপাশি অনুমোদিত নকশার তুলনায় বেশি কক্ষ নির্মাণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এশিউর গ্রুপের মালিকানাধীন রিসোর্টটির সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্রও রয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদী কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক। তবে স্থানীয়রা দাবি করেছেন, তিনি একসময় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফের আত্মীয় পরিচয় দিতেন।
জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানিয়েছেন, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে রিসোর্টটির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুজনের মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, তিন ফসলি জমি নষ্ট করে গ্রামের ভেতর রিসোর্ট নির্মাণ করা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। কৃষিজমি বিনষ্ট না করে এটি অন্য কোনো পর্যটন এলাকায় হওয়া উচিত ছিল।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!