সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
দিরাই উপজেলার ধীতপুর গ্রামের বর্গাচাষী মাখন দাসের ২২ কেদার বোরো জমির শুকনো খড় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। সোমবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের সোয়াতিয়র গ্রামের পশ্চিমে দা ভাঙা হাওরের পাশে ভরাউট নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটে। সোয়াতিয়র গ্রামটি ধীতপুর পাশেই।
২২ কেদার জমির শুকনো খড় আগুনে পুড়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষী মাখন দাস। চোখের সামনেই একসাথে এত খড় আগুনে পুড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
জানা যায়, ধীতপুর গ্রামের মাখন দাসের নিজের কোন জমি নেই। তিনি অন্যের জমি বগার্চাষ করেন। এই বছর তিনি ২২ কেদার জমি বগার্চাষ করেছেন। তার ৮টি গরু রয়েছে। ধান কাটার পর অনেক কষ্টে খড়গুলো রোদে শুকিয়ে সোয়াতিয়র গ্রামের পশ্চিমের মজুদ করে রাখেন। খড়গুলো বাড়িতে আনার জন্য আজ সোমবার একটি ট্রলি গাড়ি ভাড়া করেন। সকাল ৮ টার দিকে এক ট্রলি খড় বাড়িতে নিয়ে আসেন। এসময় হটাৎ করে খবর পান কে বা কারা তার তিনটি খড়ের স্তুপে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দৌঁড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান দাউ দাউ করে জ¦লছে খড়। এসময় গ্রামের লোকজনও এগিয়ে আসেন কিন্তু খড়গুলো শুকনো হওয়ায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় তার ৮টি গরুর সারা বছরের খাদ্য। এসময় মাখন দাস মাটিতে পড়ে কান্না—কাটি করেন।
বর্গাচাষী মাখন দাস বলেন,‘ আমার নিজের কোন জমি নেই। পরের জমি রংজমা (বগার্চাষ) করি। ৮টা গরু আছে আমার। গরু পালনের লাগি ৭ জন মানুষ দিয়া ৪ দিন অনেক কষ্ট কইরা খেড়গুলো শুকাইয়া সোয়াতিয়র গ্রামের কাছে লাইছ (উচু স্তুপ) দিয়া রাখছিলাম। ট্রলি ভড়া কইরা আইজ সকালে বাড়িতে আনা শুরু করছিলাম। একট্রিপ বাড়িতে নিয়ে আসার পর খবর পাই তিনডা লাইছেই কেলায় আগুন লাগাইয়া দিছে। গিয়া দেখি পুড়ে সব ছাই অইয়া গেছে। আমার কোন শত্রু নাই। এর আগেও সোয়াতিয়র গ্রামের কাছে দুই জন কৃষকের শুকনো খড় রাতে আগুন দিয়ে পুড়ানো হয়েছিল বলে জানান তিনি।
সোয়াতিয়র গ্রামের মুরব্বী ও শালিসী ব্যক্তিত্ব বুলবুল চৌধুরী বললেন,‘ আগুন দিয়ে গরু-ছাগলের খাবার পুড়িয়ে দেওয়ার মত খারাপ কাজ আর হতে পারে না। গেল বছর বানিয়াচং উপজেলার জয়কুমার বৈষ্ণবের ৭ কেদার জমির শুকনো খড় রাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। দুই বছর আগে আমাদের গ্রামের সফিক নূরের ৫ কেদার জমির শুকনো খড়ও রাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। একটা দুষ্ট লোক আছে, যে এই খারাপ কাজটি করছে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে শনাক্ত করার জন্য। আগামীকাল আমরা গ্রামবাসী বসবো, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এটা চলতে দেওয়া যায় না।’
দিরাই থানার ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন,‘ ধীতপুর গ্রামে কৃষকের শুকনো খড় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি কেউ জানায় নি। বিষয়টি খোঁজ—খবর নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!