প্রতিনিধি আলাউদ্দিন হক।।
রাজধানীতে সক্রিয় রয়েছে মানব পাচার চক্র।দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেকার যুবকদের স্বল্প খরচে ইউরোপ গমনের প্রলোভন দেখিয়ে ভিজিট ভিসায় মিশর নিয়ে যায় এবং সেখানে যাওয়ার পর পাসপোর্ট ও ইউরোপ গমন এর উদ্দেশ্যে সাথে করে নেয়া ডলার ছিনিয়ে নেয় এবং ভুক্তভোগীকে বন্দী করে নির্যাতন চালায় এ চক্র।
মুক্তিপণ বাবদ ৭-৮ লাখ টাকা আদায় করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে দেশে ফেরত পাঠায় এমন একটি সক্রিয় মানব পাচারকারী চক্রের হাত থেকে বেঁচে ফেরেন ভোলা সদরের চদুর চর ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলি আকবর সেলিম(৪০)।
ভুক্তভোগী সেলিম জানায় রাজধানী কদমতলীর শনির আখড়া জিয়া সরণীতে দীর্ঘদিন যাবত দুই ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়ে বাইক রাইডার হিসেবে জীবন যাপন করছিলেন তিনি।
গতবছর ২০২৪সালে দিপু নামক জনৈক প্রতিবেশীর সাথে তার পরিচয় হয়।দিপু শনির আখড়ায় স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিল।গত পাঁচ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দিপু সপরিবারে মিশর পাড়ি জমায়।মিশর যাওয়ার পর দিপু সেলিম কে ফোন করে ইউরোপ যাওয়ার প্রস্তাব দেয়,সেলিম তখন ইউরোপ যাওয়ার মত টাকা তার কাছে নেই বললে সে বলে মাত্র আড়াই লাখ টাকা খরচ করলে তোমাকে আমি মিশর নিয়ে আসতে পারবো,সেখান থেকে বাই রুট এ তোমাকে ইতালি পাঠাবো,বাকি টাকা তুমি ইতালি যাওয়ার পর মাসে মাসে আমাকে পরিশোধ করতে পারবে।
এটাই এ চক্রের প্রধান কৌশল।পরিচয়ের পর অল্প সময়ে শখ্যতা তৈরি করা এবং স্বল্প খরচে বিদেশ গমনের প্রস্তাব দেয়া।সেলিম জানায় দিপুর এ প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে যাই, তখন দিপু তার বোন (রাজিয়া,শনির আখড়ার বাসিন্দা)কে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দিয়ে আসতে বলে এবং আমি তাই করি।এর কয়েকদিন পর আমার ভিসা হয়ে গেছে টিকিটের জন্যে আরো ৩০ হাজার টাকা নেয় এবং ২৩-০৪-২০২৫ তারিখে আমার ফ্লাইট এ কথা জানায়।
২২ তারিখ আমি দিপুকে আমার ভিসা টিকিটের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বলে ওটা সময় মত হাতে পেয়ে যাবে।২৩ তারিখ দিপুর বোন রাজিয়া আমাকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে দুটি লাগেজ সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেয় এবং বলে ভিসা টিকিট এয়ারপোর্টে আমাদের লোক আছে তার কাছে পাবেন।যথারীতি বিকেল তিনটায় আমি এয়ারপোর্ট পৌছালে দিপুর একজন প্রতিনিধি এসে আমার হাতে পাসপোর্ট ও টিকেট ধরিয়ে দেয়।পরবর্তীতে কায়রো এয়ারপোর্টে নামার পর দিপু ও তার বন্ধু আলম আমাকে রিসিভ করে তাদের আস্তানায় নিয়ে যায় এবং সাথে থাকা ১২২৫ডলার ও পাসপোর্ট নিয়ে নেয়।পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি বুঝতে পারি আমি বন্দি হয়ে গেছি,আমার রুম বাইরে থেকে তালা মেরে দেয়।বিকেলে দিপু ও আলম এসে বলে তোমাকে এখান থেকে ইতালি পাঠাতে হবে আরও তিন লক্ষ টাকা লাগব।
এই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে দিপু ও আলম হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারে এবং টাকার ব্যবআস্থা না করলে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।আমি দেশে আমার আত্মীয়-স্বজনকে ফোন করে কয়েক ধাপে ৬ লক্ষ টাকা প্রদান করি।সর্বশেষ ধাপে টাকা নেওয়ার পর রাজিয়া তার স্বামী ও কন্যা আমার স্ত্রী অজুফা খাতুনে কাছ থেকে স্ট্যাম্পে লিখিত নেয় আমি দেশে ফিরে যেন কোন প্রকার মামলা মোকদ্দমা করতে না পারি।১৮ দিন দ্বীপু আলম গংদের শারীরিক নির্যাতন এবং বন্দী দশা থেকে মুক্ত হয়ে গত ১১/৫/২০২৫ তারিখ আমি বাংলাদেশে ফেরত আসি।
একমাত্র অবলম্বন রাইড শেয়ারিং এর মোটর বাইকটি বিক্রি করে একদিকে বেকার জীবনযাপন অপরদিকে মুক্তিপনের জন্যে সুদের উপর নেয়া টাকার চাপে বর্তমানে দিশেহারা জীবন যাপন করছে ভুক্তভোগী সেলিম। দিপু-রাজিয়ার মত মানব পাচারকারীদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন নাগরিক সমাজ।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!