গাঢ় রোদের আলোর ছটায় ছেঁড়াদ্বীপের সমুদ্রজল এক অপূর্ব সবুজ আভায় মুগ্ধ করে দেয়। বাতাসের দোলায় ঢেউ খেলানো জলে ভেসে বেড়াচ্ছে বাদামি রঙের সামুদ্রিক শৈবাল। দূর থেকে বড়টিকি পানচিল উড়ে যাচ্ছে সমুদ্রের বুকে, আর ঢেউয়ের ছন্দে ফেনা তুলে আছড়ে পড়ছে জলরাশি। ঢেউয়ের এই ছন্দে মুগ্ধ হতে হতে পৌঁছে যাই ছেঁড়াদ্বীপের কেয়াবনে। উদ্ভিদ গবেষণার কাজে আসা আমাদের কাঠের জলযানটি থামলে নেমে পড়লাম দ্বীপের বুকে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বর্ণিল মাছ, কাঁকড়া ও শৈবাল।
এই ছোট্ট দ্বীপে কেয়ার জঙ্গলের পাশে দেখা মিলল ডাহুক, মাছরাঙা, বাদামি লাটোরা ও ছোট ছোট পাখির। তবে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ছিল দ্বীপের সবচেয়ে পুরনো ও বিশাল কাঠবাদাম গাছটি। এই গাছটির ছায়াতলে বসে মনে হলো শৈশবের কথা—যখন আমরা গাঁয়ের বাদামগাছ থেকে কাঠবাদাম কুড়িয়ে রোদে শুকিয়ে খেতাম। শতবর্ষী এই গাছটি এখনো সামুদ্রিক ঝড়-বাতাস উপেক্ষা করে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অবদান রেখে চলেছে।
কাঠবাদামগাছের আদি নিবাস প্রশান্ত মহাসাগরের মেলেশিয়া দ্বীপাঞ্চলে হলেও বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গে ও ঢাকার রমনা পার্কেও এই গাছের দেখা মেলে। শীতকালে এই গাছের পাতার সিঁদুর লাল রং দেখতে যেমন মনোমুগ্ধকর, তেমনি এর বীজও গ্রামবাংলার কিশোর-কিশোরীদের কাছে প্রিয়। পাশাপাশি, এটি বিরল পাখি চন্দনা টিয়া ও কোস্টারিকার ম্যাকাও পাখির অন্যতম খাদ্য।
তবে ছেঁড়াদ্বীপের এই অনন্য জীববৈচিত্র্য অপরিকল্পিত পর্যটনের কারণে হুমকির মুখে পড়ছে। পর্যটকদের অপ্রয়োজনীয় চাপ ও পরিবেশের ওপর অবহেলার কারণে দ্বীপের পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ছেঁড়াদ্বীপসহ সেন্ট মার্টিনে অপরিকল্পিত পর্যটন বন্ধ করা উচিত, যাতে এই অসাধারণ জীববৈচিত্র্য টিকে থাকে ভবিষ্যতের জন্য।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!