হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন এক জিকিরমগ্ন ও বিনয়ী আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি আল্লাহর স্মরণে থাকতেন। প্রশংসা শুনলে লজ্জায় মাথা নিচু করতেন, আর বলতেন— “আমি তো অনেক নিচু, অনেক নিচু।”
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম লিখেছেন— হাফেজ্জী হুজুর সর্বদা আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকতেন। এমনকি ছোট বাচ্চারাও তাঁর ঠোঁট নড়তে দেখে বলত, “নানা, আপনি আল্লাহ বলছেন?”
হুজুর প্রতিদিন নয় পারা কুরআন তিলাওয়াত করতেন— মাগরিবের পর তিন পারা, তাহাজ্জুদের সময় তিন পারা, হাঁটা-চলার মধ্যে তিন পারা। তিনি বলতেন, “হাফেজ সাহেবরা মুখস্থ নয়, দেখে পড়ো। যত দেখে পড়বা, তত ছওয়াবও বাড়বে।”
জিকিরের গুরুত্ব কুরআনের আলোকে
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন— “বেশি বেশি জিকির করো।” রসুলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবাগণ ছিলেন অধিক জিকিরকারী। হাফেজ্জী হুজুর বলতেন, “তালিবে ইলমের পড়াশোনাই জিকির।”
জবান একটাই কেন
তিনি বলতেন, “আল্লাহ মানুষকে দুটি চোখ, দুটি হাত, দুটি পা দিয়েছেন, কিন্তু জবান দিয়েছেন একটাই— যেন তা শুধু আল্লাহর জিকিরে ব্যবহৃত হয়।”
হজ সফরের স্মৃতি
১৯৭৫ সালে হজে গিয়ে ছয় মাসে তিনি মুফতি আবদুল্লাহ তামিমকে সম্পূর্ণ বুখারি শরিফ পড়ান। মসজিদে নববীতে তাঁর নামাজে ছিল এক অদ্ভুত খুশু ও নূরের ছটা।
হুজুরের কান্না
জেদ্দা থেকে মদিনা যাওয়ার পথে তিনি সারাপথ কেঁদে বলেছিলেন— “এই পাহাড়গুলো নবীজী ﷺ দেখেছেন। আজ আমি সেই পাহাড় দেখছি, যেগুলো তিনি দেখেছিলেন।”
শেষ জীবন
জীবনের শেষ দিকে হাসপাতালে থেকেও তিনি দুনিয়ার মোহ থেকে বিমুখ ছিলেন। মৃত্যুর আগে বলেন— “আমাকে শুয়ে নামাজ পড়তে হবে, আমি দাঁড়িয়ে নামাজ ছাড়া কিছু বুঝি না।”
তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা
তিনি বলতেন,
“আল্লাহর জিকির বাদে যা কিছুই করো, তা জীবন বরবাদ।”
“আল্লাহর ভালোবাসার কথা ছাড়া যা পড়ো, সবই বৃথা।”
উস্তাদদের প্রশংসা
হযরত মাওলানা আবরারুল হক (রহ.) লিখেছিলেন— “জীবনে অনেক বুযুর্গ দেখেছি, কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরকে দেখে বুঝেছি, তিনিই আমাদের পূর্বসূরিদের সত্যিকার উত্তরসূরি।”
তাঁর ভালোবাসা ও শেষ উপদেশ
একদিন হুইলচেয়ারে বসে হুজুর বললেন, “তুমি অনেক মুতালাআ করো, তাই আমি তোমার জন্য যিকির কমিয়ে দিচ্ছি— তিন হাজার বার করো।”
শেষে দোআ চাইলেন— “আমার জন্য দোআ করো, যেন আমি হযরতের অসিয়ত ও নসীহত রক্ষা করতে পারি।”
 লগইন
            
                                
                                    হাফেজ্জী হুজুর রহ.: বিনয় ও যিকিরে ভরা এক জীবন| ছবি সংরহীত
                                
                                                    
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!