১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আলেম সমাজও দেশের স্বাধীনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঈমান, আদর্শ ও দেশপ্রেমকে শক্তি করে তাঁরা ছিলেন সংগ্রামের অগ্রভাগে। মসজিদের মিম্বর, মাদরাসার পাঠশালা থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র—সবখানেই ছিল তাঁদের দৃঢ় উপস্থিতি। কেউ অস্ত্র হাতে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন, কেউ নেতৃত্ব দেন, কেউ আবার বয়ান ও বক্তব্যের মাধ্যমে জাতিকে স্বাধীনতার পথে উদ্বুদ্ধ করেন।
এই আত্মত্যাগ, সাহসিকতা ও শাহাদতের ইতিহাস আজও স্মরণ করিয়ে দেয়—স্বাধীনতা অর্জনে আলেম সমাজের ভূমিকা ছিল গভীর, দৃঢ় ও অবিস্মরণীয়।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আলেম সমাজ ঈমান ও দেশপ্রেমকে শক্তি করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধক্ষেত্র, নেতৃত্ব ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম—সব জায়গাতেই ছিল তাঁদের অবদান।
সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এক অবিস্মরণীয় নাম মওলানা ভাসানী। ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে পাঁচটি প্রধান রাজনৈতিক দলের আটজন সদস্য নিয়ে গঠিত সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি ছিলেন তিনি। মজলুম জননেতা হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আলেম শহীদ বুদ্ধিজীবী
মাওলানা অলিউর রহমান
সিলেটে মুক্তিসংগ্রামের সক্রিয় এই আলেম ‘শরিয়তের দৃষ্টিতে ছয় দফা’ ও ‘ছয় দফা ইসলামবিরোধী নয়’ শীর্ষক পুস্তিকা রচনা করেন। ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ তাঁকে আলবদর বাহিনী অপহরণ করে এবং ১৪ ডিসেম্বর তিনি শহীদ হন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় তাঁকে চিকিৎসক পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, কারণ তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকও ছিলেন।
যোদ্ধা ও সংগ্রাহক আলেম
মুফতি আবদুস সোবহান
চট্টগ্রামের এই আলেম ছিলেন ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি নিজে যুদ্ধে অংশ নেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেন এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে তরুণদের যুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা
মাওলানা নূরুল আফসার
মনোরহাট সিনিয়র মাদরাসার শিক্ষার্থী নূরুল আফসার ৩১ আগস্ট ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। দশ নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে ফেনী ও নাজিরহাট এলাকায় একাধিক অভিযানে অংশ নেন। যুদ্ধ শেষে একই রেজিমেন্টে সার্জেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন।
সংখ্যালঘু পুনর্বাসনে মানবিক ভূমিকা
মাওলানা মাহমুদুল হাসান
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার এই আলেমের পরিবারের একাধিক সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তাঁর বাড়িতে শত শত সংখ্যালঘু পরিবার আশ্রয় নেয়। এ কারণে পাকিস্তানি বাহিনী তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
মাদরাসায় আশ্রয়, গণহত্যা
মাওলানা আবুল হাসান যশোরী
যশোর রেলস্টেশন মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আবুল হাসান যশোরী মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর মাদরাসায় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে আশ্রয় দেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় তিনি সহ আরও একুশজন শহীদ হন।
লগইন
মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন অগণিত আলেম | ছবি সংগ্রহীত
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!