নতুন বছর শুধু ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন নয়, বরং মুমিনের জন্য এটি হতে পারে আত্ম-উন্নতির একটি নতুন অধ্যায়। আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য এই সময়টিকে কাজে লাগানোর গুরুত্ব অপরিসীম।
ইংরেজি নববর্ষ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ কোনো তাৎপর্য বহন করে না। তবে যেহেতু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইংরেজি বছরের হিসাব গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটি অনেকের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নতুন বছরের শুরুতে একজন মুমিনের জন্য করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো বুঝে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
নতুন বছরে মুমিনের করণীয়
আল্লাহর কাছে তওবা ও ক্ষমা চাওয়া
নতুন বছর হতে পারে আল্লাহর কাছে তওবা করার এক অনন্য সুযোগ। অতীতের ভুল ও পাপ থেকে মুক্তি চেয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করা মুমিনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "আর তারা যারা বলে, 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের নফসের অশুদ্ধতা ক্ষমা কর এবং আমাদের কর্মের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অংশটি দান কর।'" (সুরা আল-ফুরকান ২৫:৭৪)।
আত্ম-উন্নয়নের সংকল্প গ্রহণ
নিজেকে বদলানোর জন্য নতুন বছর একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে। ঈমান, আমল এবং আখলাকের উন্নয়ন সাধন করতে সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত। নবীজী (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি তার ঈমানের ভিত্তিতে কাজ করে, সে তার জীবনকে পরিপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ করে তোলে।"
ঈমান ও ইবাদতের উন্নয়ন
নতুন বছরে ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং সৎকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করা মুমিনের প্রধান করণীয়। নামাজ, রোজা এবং দানের ক্ষেত্রে আরও গভীরতা আনতে নতুন পরিকল্পনা করা উচিত।
সময় ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ
ইসলামে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। নবীজী (সা.) বলেছেন, "দুই নেয়ামত রয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত থাকে: একটি হলো সুস্থতা এবং অন্যটি হলো সময়।" (বুখারি) সময়ের সঠিক ব্যবহারে সাফল্য আসে, যা মুমিনের জীবনে অপরিহার্য।
পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন
নতুন বছর পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনে নিজেকে উৎসর্গ করার সময় হতে পারে। পরিবারের সদস্যদের ইসলামের পথে পরিচালিত করার মাধ্যমে সমাজেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
নতুন বছরে মুমিনের বর্জনীয়
অশ্লীলতা ও অবাধ আনন্দ পরিহার
নতুন বছরের উদ্যাপন উপলক্ষে অনেকেই অবাধ আনন্দ এবং অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। এটি ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহর প্রতি ঈমান ধরে রেখে একজন মুমিনের উচিত এমন সব কর্মকাণ্ড এড়িয়ে চলা যা পাপের দিকে ধাবিত করে।
ধর্মীয় উৎসব হিসেবে নতুন বছর উদ্যাপন না করা
ইসলামে ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপনের কোনো বিধান নেই। যদি কেউ এটিকে ধর্মীয় উৎসব হিসেবে গ্রহণ করে, তবে তা শিরকের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
অপচয় এবং বিলাসিতা থেকে বিরত থাকা
নতুন বছরে অতিরিক্ত খরচ এবং বিলাসিতার প্রবণতা থেকে বিরত থাকা উচিত। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তি তার সম্পদ অপচয় করে, সে শয়তানের ভাই।" (সুরা বনি ইসরাইল ২৭)।
অহংকার ও আত্মতুষ্টি এড়িয়ে চলা
নিজেকে উন্নত করার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও অহংকার এবং আত্মতুষ্টি ইসলামে নিন্দনীয়। নবীজী (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি এক চিমটি অহংকার নিয়ে মরে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।" (মুসলিম)
পূর্ববর্তী বছরের ভুল থেকে শিক্ষা না নেওয়া
নতুন বছরে সবচেয়ে বড় ভুল হবে পূর্ববর্তী বছরের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা না নেওয়া। আল্লাহ তার বান্দার তওবা কবুল করেন, যখন সে সত্যিকারের নিষ্ঠার সঙ্গে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে।
নতুন বছরে নতুন সূচনা
একজন মুমিনের জন্য নতুন বছর মানে কেবল সময়ের পরিবর্তন নয়, বরং নিজেকে আরও ভালোভাবে গড়ে তোলার এক অনন্য সুযোগ। আল্লাহর কাছে আরও নিকটবর্তী হওয়া, সৎকর্মে নিয়োজিত হওয়া এবং সময়ের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা—এই তিনটি বিষয় নতুন বছরে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি ও সাফল্য আনবে।
নতুন বছরে মুমিনের লক্ষ্য হোক নিজের জীবনকে ইসলামের সঠিক পথে পরিচালিত করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!