আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দুইভাবে আবাদ করেছেন—একটি বাহ্যিক বা জাগতিক আবাদ, অন্যটি হলো হাকিকি আবাদ, অর্থাৎ দ্বীনের বিস্তার ও আখেরাতের প্রস্তুতি। একজন নারী যদি স্বামীর দ্বীনি জীবনের সহচর হন, তবে তিনি কেবল সংসার নয়, সমাজকেও আলোকিত করেন।
বিস্তারিত:
মানুষের জীবনে প্রকৃত প্রশান্তি নিহিত আছে সাদাসিধে জীবনযাপনে। বাহ্যিক চাকচিক্য ও দুনিয়ার ভোগবিলাসে নয়, বরং দ্বীনি পরিবেশ গড়ে তোলার মধ্যেই শান্তির আসল উৎস।
দ্বীনি পরিবেশ গঠনের গুরুত্ব
যদি পরিবারে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকিরের পরিবেশ তৈরি করা যায়, তবে সেই ঘর হবে প্রশান্তি ও আখেরাতমুখী জীবনের নীড়। সন্তানরাও সেই পরিবেশে বেড়ে উঠবে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক শিশু ফিতরাতের উপর জন্ম নেয়, পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি, নাসারা বা মাজুসি বানায়।” (বুখারি: ১৩৮৫)
নারী: স্বামীর শান্তির উৎস
আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই স্ত্রী সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও।” (সুরা আর-রূম: ২১)
স্বামীর ক্লান্তি ও মানসিক চাপ দূর করার অন্যতম মাধ্যম হলো স্ত্রীর ভালোবাসা ও সহানুভূতি। নবী করিম (সা.)-এর জীবনে হজরত খাদিজা (রা.) এ বিষয়ে সর্বোত্তম উদাহরণ। প্রথম ওহি নাজিলের সময় নবী করিম (সা.) যখন উদ্বিগ্ন ছিলেন, তখন খাদিজা (রা.) তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, “আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না, আপনি আত্মীয়তা রক্ষা করেন, অসহায়দের সহায়তা করেন, অতিথিকে আপ্যায়ন করেন এবং বিপদে মানুষের পাশে থাকেন।
” (বুখারি: ৩)
সাদাসিধে জীবনেই প্রশান্তি
যে নারী স্বামীকে দুনিয়ার মোহে উদ্বিগ্ন না করে বরং দ্বীনি কাজে উৎসাহিত করে, সে প্রকৃত সুখ লাভ করে। জীবনে সাদাসিধে খাবারেও শান্তি পাওয়া যায়, কিন্তু দুনিয়ার লোভ কখনো শেষ হয় না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক, আর মৃত্যু এসে তাকে ধরে ফেলে।” (বুখারি: ৬৪১৭)
হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বলেছেন, “মানুষের খাহেশ কখনো পূর্ণ হয় না; একটি পূর্ণ হলে আরেকটি নতুন চাহিদা জেগে ওঠে।” (তাবাকাত ইবনে সা’দ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৩৪)
খাহেশ নয়, আখেরাতমুখী হৃদয় চাই
যে ব্যক্তি আখেরাতকে উদ্দেশ্য বানায়, আল্লাহ তার মনকে পরিতৃপ্ত করেন। নবী করিম (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি আখেরাতকে উদ্দেশ্য বানায়, আল্লাহ তার দুনিয়া তার কাছে এনে দেন; আর যে দুনিয়াকে উদ্দেশ্য বানায়, তার দারিদ্র্য তার সামনে রাখা হয়।”
(সুনান ইবনে মাজাহ: ৪১০৫)
হজরত আবু দারদা (রা.) দোয়ায় বলতেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই এমন হৃদয় থেকে, যা বিভ্রান্ত ও বিচ্ছিন্ন।”
(আল-মুসান্নাফ, ইবনে আবী শায়বা: ৩৫৮৯২)
তিনি বোঝাতে চেয়েছেন—যে হৃদয় দুনিয়ার চিন্তায় বিভক্ত, সেটিই অশান্তির মূল। আখেরাতমুখী হৃদয়ই প্রকৃত প্রশান্তির চাবিকাঠি।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!