মানুষের শরীরে এমন কিছু অঙ্গ আছে, যেগুলো আকারে ছোট হলেও আত্মার পবিত্রতা ও ঈমানের দৃঢ়তায় এর ভূমিকা অপরিসীম। তার মধ্যে সবচেয়ে সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ অঙ্গ হলো চোখ। এই চোখের মাধ্যমেই মানুষ সবচেয়ে বেশি গুনাহে লিপ্ত হয়।
মানুষের যে অঙ্গের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি গুনাহ হয়, সেটি হলো চোখ। চোখের দৃষ্টিই অনেক সময় মানুষের অন্তরকে কলুষিত করে, নেক আমলের পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং শয়তানের নানা ফিতনার দরজা খুলে দেয়।
তাই ইসলামে দৃষ্টি সংযম বা নজর হেফাজতকে ঈমানের অংশ ও চরিত্র নির্মাণের মূল উপাদান বলা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন—
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ
অর্থ: “মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযম করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।”
(সুরা আন-নূর, আয়াত ৩০)
পরবর্তী আয়াতে নারীদেরও একই নির্দেশ দিয়ে বলেন—
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ
অর্থ: “মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে।”
(সুরা আন-নূর, আয়াত ৩১)
এই আয়াত দুটো প্রমাণ করে যে, দৃষ্টি রক্ষা করা শুধু নৈতিকতার নির্দেশ নয়; বরং এটি ঈমানের দাবিও বটে।
দৃষ্টি সংযমে ঈমানের মাধুর্য
রসুলুল্লাহ ﷺ বলেন—
النظرةُ سهمٌ من سهامِ إبليسَ مسمومٌ، فمن تركها للهِ آتاهُ اللهُ إيمانًا يجدُ حلاوتَه في قلبِهِ
“দৃষ্টি হলো ইবলিসের বিষাক্ত তীরসমূহের একটি তীর। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয় থেকে সেই (হারাম) দৃষ্টিকে পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে এমন ঈমান দান করেন যার মাধুর্য সে তার অন্তরে অনুভব করে।”
(আল-মুস্তাদরাক: ৭৮৭৫)
আরেকটি হাদিসে তিনি বলেন—
من نظر إلى محاسنِ امرأةٍ ثمَّ غضَّ بصرَهُ، أورثَ اللهُ قلبَهُ حلاوةَ عبادةٍ يجدُها إلى يومِ القيامةِ
“যে ব্যক্তি কোনো নারীর সৌন্দর্যের দিকে তাকানোর পর সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, আল্লাহ তার অন্তরে ইবাদতের এমন এক মাধুর্য দান করেন যার স্বাদ সে কিয়ামত পর্যন্ত অনুভব করবে।”
(আলবানী: ৪৯)
এই হাদিস দুটি প্রমাণ করে যে, হারাম দৃষ্টি থেকে বিরত থাকা শুধু পাপ থেকে রক্ষা করে না, বরং ইবাদতের আনন্দ ও প্রশান্তি এনে দেয়।
অন্তরের প্রশান্তি ও নুর লাভ
চোখ যখন হারাম দেখে, তখন অন্তর অস্থির হয়, তাকওয়া দুর্বল হয়। কিন্তু দৃষ্টি সংযম করলে হৃদয় নুরে ভরে যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَـٰكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ
অর্থ: “বস্ত্তত চোখ তো অন্ধ হয় না; বরং অন্ধ হয় অন্তর।”
(সুরা হজ, আয়াত ৪৬)
দৃষ্টি সংযমের সুফল:
১️⃣ চরিত্র ও লজ্জাশীলতা বৃদ্ধি
রসুল ﷺ বলেন,
الْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ
“লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা।” (সহিহ বুখারি: ৯)
২️⃣ বড় পাপ থেকে দূরে থাকা
فالْعَيْنانِ زِناهُما النَّظَرُ
“চোখের জিনা হলো হারামের দিকে তাকানো।” (সহিহ মুসলিম: ২৬৫৭)
৩️⃣ দাম্পত্য জীবনে সুখ ও স্থায়িত্ব
দৃষ্টি সংযমকারী ব্যক্তি হারাম আকর্ষণ থেকে বাঁচে, ফলে দাম্পত্য জীবনে সন্দেহ বা কলহ সৃষ্টি হয় না।
৪️⃣ আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ
যে দৃষ্টি সংযম করে, আল্লাহ তাকে নেক আমলের তাওফিক দেন ও পাপের পথ বন্ধ করে দেন।
নজর হেফাজতের বাস্তব উপায়:
পর্দা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল কন্টেন্ট থেকে দূরে থাকা
সময়কে উপকারী কাজে ব্যয় করা
তাকওয়া ও আল্লাহভীতি জাগ্রত রাখা
কোরআন তিলাওয়াত ও নফল ইবাদতে মনোযোগী হওয়া
নজর মানুষের অন্তরের দরজা। যে এই দরজা রক্ষা করে, তার হৃদয় কলুষমুক্ত হয়, জীবন হয় শান্তিময়, আর ঈমান হয় পরিপূর্ণ। দৃষ্টি সংযম শুধু নৈতিকতার শিক্ষা নয়, বরং এটি আত্মিক প্রশান্তি ও আখিরাতের নাজাতের অন্যতম মাধ্যম।
লগইন
মানুষের যে অঙ্গ দিয়ে সবচেয়ে বেশি গুনাহ হয় | ছবি সংগ্রহীত
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!