স্টাফ রিপোর্টার - ইমরান হক।।
নদী ভাঙন বাংলাদেশের একটি অন্যতম বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিশেষ করে পদ্মা নদীর বিশাল সীমান্ত এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। বর্তমানে আমরা যে অংশে দাঁড়িয়ে আছি, সেটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় ক্রমাগত ভাঙন চলছে।
অন্যান্য অনেক এলাকায় পাড় বাঁধাই করা হয়েছে, কিন্তু এই অংশটুকু (প্রায় ২৫ কিলোমিটার) এখনও বাকি রয়েছে। এই ২৫ কিলোমিটার পাড় বাঁধার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে ১৭ কিলোমিটার জিও ব্যাগ এবং ৪ কিলোমিটার ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে নদী পরিদর্শন শেষে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আ. ন. ম. বজলুর রশীদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মা নদীর অন্যান্য এলাকায় পাড় বেঁধে ফেলা হয়েছে, তবে ২৫ কিলোমিটার এলাকায় এখনো ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকার স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্রুত অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, এই বাঁধ নির্মাণ হলে পদ্মা নদীর এই অংশে আর কোনো ভাঙনের সমস্যা থাকবে না। এতে কৃষিজমি, বসতবাড়ি এবং অবকাঠামো রক্ষা পাবে। সরকার এই প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশাবাদী।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, প্রকল্পের আওতায় সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ২৫ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হবে, যার মধ্যে ৪ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমরা আশা করছি, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় জনগণ স্থায়ীভাবে নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে।
নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত সচিব স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজাহার আলীসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
এই প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে, সরকার শীঘ্রই এটি অনুমোদন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান, যা নদীভাঙনের হাত থেকে এলাকাকে রক্ষা করবে।
প্রকল্পটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার পর এটি পরিকল্পনা কমিশনে যাবে এবং সেখান থেকে অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে। এই মুহূর্তে সঠিক সময় বলা সম্ভব নয়, তবে দ্রুত কাজ শুরু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যা একটি বড় অঙ্কের বিনিয়োগ। তবে স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধ করতে এই ব্যয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সরকারের কাছ থেকে এই অর্থের সংস্থান পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পদ্মা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষদের দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব হবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!