মাসুম পারভেজ।। ওমান প্রবাসী রাব্বি কে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।
নিহত রাব্বি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলী গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান কালু ও মায়া আক্তারের একমাত্র পুত্র।
ওমানে থাকা তার নিকটাত্মীয়-স্বজন রাব্বির মরদেহ উদ্ধার করে ।
বিষয়টি নিয়ে রাব্বির গ্রামের বাড়ি কড়ৈতলী এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। রাব্বির গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
জানা যায় গত ৬ ই জুলাই ২০২৫ রোজ রবিবার ওমানে ঝুলন্ত অবস্থায় রাব্বির লাশ উদ্ধার করে একই গ্রামের নিকট আত্মীয়-স্বজন।
অভিযোগ উঠেছে ওমান প্রবাসী রাব্বির মামাশ্বশুর জহির ও তার ভাই আরিফ হোসেন বাবুল সহ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাব্বি কে পিটিয়ে হত্যা করে তার লাশ ঘরের ভেতরে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা সাজিয়ে থাকতে পারে।
এমন মর্মাহত ঘটনা রাব্বির পরিবার কে জানানো হলে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো পরিবার সহ এলাকাবাসী । একমাত্র প্রবাসী ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ রাব্বির হতভাগা বাবা-মা।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৩ জুলাই ২০২৫ বৃহস্পতিবার কাজের সাইটে গ্লাস কাটাকে কেন্দ্র করে রাব্বির মামাশ্বশুর জহিরের সাথে কথা কাটাকাটি হয় রাব্বির।
এক পর্যায়ে জহির রাব্বিকে পিটিয়ে আহত করে। এই ঘটনায় রাব্বি তার কফিলের (ওমানের স্থায়ী বাসিন্দা) কাছে বিচার দেয়। কপিল ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কাজের এরিয়ার বাইরে থাকায় আসতে দেরি হবে বিধায় শনিবার ৫ ই জুলাই পর্যন্ত বিষয়টা মীমাংসার জন্য সময় নেয়।
গুরুত্বপূর্ণ কাজে থাকায় কপিল শনিবার ৫ই জুলাই না আসতে পারায় শনিবারও বিষয়টা অমীমাংসিত থেকে যায় ফলে মূল বিপত্তি বাদে এখানেই।
রবিবার কাজে যাওয়ার জন্য রাব্বির মামাশ্বশুর জহির ও তার ভাই আরিফ হোসেন বাবুল রাব্বি কে চাপ প্রয়োগ করে। রাব্বি বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই ২০২৫ মারামারির বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাজে যাওয়ার কথা অপারগতা প্রকাশ করে।
অভিযোগ উঠে, রবিবারে এ বিষয়টা নিয়ে পূনরায় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ওমানে প্রভাবশালী জহির ও তার ভাই আরিফ হোসেন বাবুল মিলে রাব্বি কে আবারো পেটানো শুরু করে বলে জানান ওমানে থাকা রাব্বির সহকর্মীগন।
রাব্বির বাবা অভিযোগ করে বলেন রবিবার ৬ই জুলাই সকালে পেটানোর ঘটনা জানান রাব্বির কুমিল্লা প্রবাসী এক বন্ধু।
রাব্বির বাবা-মা জানান, এ পেটানোর ফলেই এক পর্যায়ে রাব্বি নিহত হন। ঘটনা ধামাচাঁপা দিতে রাব্বির মরদেহটি ঘরের ভেতরে নিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে জানান ঐ বন্ধু।
এ ঘটনায় রাব্বির মামাশ্বশুর জহির ও তার ভাই আরিফ হোসেন বাবলু ধামাকচাঁপা দিতে দেশে বিদেশ হুমকি ধুমকি চালিয়ে আসছে।
সেটা কে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতেও অপপ্রচার চালায় জহির ও তার ওমানে থাকা আত্মীয়স্বজন।
এদিকে, রাব্বি মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে তার স্ত্রী নুপুর আক্তার ভাবনা এগারো মাসের সন্তান কে নিয়ে কৌশলে মামার সাথে সকাল ১০ টায় রাব্বির বাড়ি থেকে ভাবনার নানার বাড়ি চলে যায়।
ভাবনার নানার বাড়ি একই বাড়ির পুকুরের এপাড় ওপাড়ে অবস্থিত। ভাবনার বাবার নাম বাবলু।
তার কিছুক্ষণ পরে প্রায় আনুমানিক ১টার দিকে রাব্বির মরার বিষয়টি জানাজানি হয়। রাব্বির পরিবারের অভিযোগ, রাব্বি কে হত্যার পর তারা রাব্বির সহধর্মিনী ভাবনাকে রাব্বির মামাশ্বশুর এসে নিয়ে যায়।
তা না হলে এতদিন রাব্বির সহধর্মিনী রাব্বির বাড়ি থাকতে পারলেও সেদিন কেন তড়িঘড়ি করে তার নানার বাড়ির লোকজন এসে শশুর শাশুড়ি কে কিছু না জানিয়ে পুত্রবধূ ভাবনাকে রাব্বির বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।
রাব্বির বাবা সন্দেহ প্রকাশ করেন, রাব্বি নিহতের ঘটনা শশুরবাড়ির লোকজন আগে থেকে জানতো, এখন পরিকল্পিতভাবে তারা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
অভিযোগ রয়েছে, ১০০ গজের মধ্যে দূরত্ব হলেও রাব্বি মারা যাওয়ার ৮ দিন পেরিয়ে গেলেও রাব্বির সহধর্মিনী ভাবনা ও তার আত্মীয়স্বজনরা রাব্বির বাড়িতে পরিবারের খোঁজখবর নিতে আসেনি।
বিষয়টা নিয়ে রাব্বির সহধর্মিনীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমার স্বামীর বাড়িতে স্বামীর লাশ দেখতে যেতে পারিনি।
আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে প্রতিনিয়ত মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। ভাবনা জানান, তার স্বামী আত্মহত্যা করেছে। তার কাছে প্রমাণ রয়েছে। আত্মহত্যার প্রমাণের জন্য রাব্বির স্ত্রী ভাবনার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা এবং মুঠোফোনে বার্তা পাঠানো হলেও প্রতি উত্তর করেন নি তিনি। ফলে প্রবাসী রাব্বি নিহতের ঘটনাটি নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা গুঞ্জন ।
৮ নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার সেলিম জিতু জানান, রাব্বি মৃত্যুর খবরটি পেয়েছি, যখনই খবরটা শুনি, আমার অবস্থান থেকে লাশ দেশে আনার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করি, তিনি আরও বলেন, আমি চাই বিষয় টি আত্মহত্যা নাকি হত্যা সেটি উদঘাটিত হোক। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কাছে আমার জোরালো আবেদন, রাব্বি নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং প্রকৃত অপরাধী শাস্তির আওতায় আসুক।
এমন মর্মাহত ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের মাতম বইছে। চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনা যেনো আর না ঘটে সেজন্য এলাকার সচেতন মহল জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন যেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীরা সনাক্ত হয় এবং প্রকৃত অপরাধীরা যেনো বিচারের আওতায় আসে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!