চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে শুক্রবার সনাতন সম্প্রদায়ের এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়, যা সাধু সন্তদের উদ্যোগে বিশেষ গুরুত্ব পায়। বিপুল সংখ্যক হিন্দু সম্প্রদায়ের উপস্থিতি গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং সমাবেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সমাবেশের প্রধান বক্তা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি। এটি কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়; আমাদের দাবি হল সব নাগরিকের মধ্যে সমান মর্যাদা ও অসাম্প্রদায়িকতা।” তিনি আরও জানান, আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন।
সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক কাঞ্চন আচার্য বলেন, “গত ৫৩ বছরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কোনো বিচার হয়নি।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সমান এবং সরকারের দায়িত্ব তা রক্ষা করা।”
আট দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়
শুক্রবারের সমাবেশে আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
. দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন
. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন
. ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন
. সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন
. দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন
. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপাসনালয় নির্মাণ
. সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন
. দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দেওয়া
. সমাবেশের প্রেক্ষাপট
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী আরও বলেন, “আমরা নীরব থাকব না। সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ৫০০ মসজিদ করেছে। আমরা একে স্বাগত জানিয়েছি, কিন্তু অন্য ধর্মের জন্য কী করেছে?” তিনি এও উল্লেখ করেন যে, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জন্য কমিশন গঠন হলেও তার ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন মতামত উত্থাপিত হচ্ছে, যেখানে কেউ বলছেন যে আওয়ামী লীগ আমলে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ এভাবে সোচ্চার হয়নি। অন্যদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, “আমরা যে সরকারের আমলেই হোক, যত অন্যায়ের শিকার হয়েছি তার বিচার চাই।”
পরবর্তী পদক্ষেপ
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে তাঁদের দাবির বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। তিনি বলেন, “সরকার ছয়টি কমিশন করেছে কিন্তু সেই কমিশনে তো সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেই। আমরা চাই যেন আমাদের কথা তুলতে পারি।”
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেছেন, “কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে।”
এখন অপেক্ষায় থাকুন, সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের দাবির প্রতিকার কিভাবে আসে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!