ইমন সরকার, ভালুকা উপজেলা প্রতিনিধি।।
ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আবেগের মেলা ফিরে এল এক নতুন উৎসাহে
ভালুকার বৈশাখী মেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আবেগের এক মেলবন্ধন
ময়মনসিংহের ভালুকা যেন ফিরে পেল তার চিরচেনা রঙ। পাঁচ বছরের দীর্ঘ বিরতির পর বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে ঘিরে জমে উঠেছে সেই বহু প্রতীক্ষিত বৈশাখী মেলা। এটি কেবল একটি মেলা নয়, বরং ভালুকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত এক আবেগের নাম।
ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার সূচনা
আশির দশকের গোড়ার দিকে যাত্রা শুরু করা এই বৈশাখী মেলা সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছিল ভালুকাবাসীর সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বার্ষিক উৎসব। মেলা মানেই ছিল মুখরিত মাঠজুড়ে হস্তশিল্প, লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, মাটির তৈজসপত্র, বেলুন, মুখোশ, ঘুড়ির পসরা, গ্রামীণ খাবারের ঘ্রাণ আর শিশুদের চঞ্চল হাসি।
কিন্তু ২০২০ সালের বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারির থাবায় থমকে যায় ভালুকার প্রাণচঞ্চল বৈশাখ। প্রশাসনের নির্দেশে মেলা বন্ধ রাখা হয় জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায়। এরপর বছর গড়িয়েছে একে একে পাঁচটি বৈশাখ, কিন্তু ফিরে আসেনি সেই রঙিন আনন্দ।
ফিরে আসা ঐতিহ্য: পাঁচ বছর পর প্রাণচাঞ্চল্য
অবশেষে, ২০২৫ সালের পহেলা বৈশাখে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেল ভালুকা। উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে, ভালুকা সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজন করা হয় উৎসবের—নাগরদোলা থেকে মুখোশ, ঘুড়ি থেকে বাঁশের বাঁশি—সবকিছু যেন জানান দিল: "ফিরে এসেছি, আগের থেকেও বেশি উচ্ছ্বাসে।"
হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলার মাঠ। শুধু ভালুকার নয়, আশপাশের উপজেলা থেকেও মানুষ আসে দল বেঁধে—কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা বহুদিনের পুরনো বন্ধুকে খুঁজে নিতে এই প্রাণের উৎসবে। কোলাহল আর আনন্দের ভিড়ে হঠাৎ হঠাৎ দেখা মেলে চেনা মুখ, স্মৃতিময় হাতছানি।
ভালুকার সংস্কৃতির মেরুদণ্ড: মেলা ও তার প্রভাব
ভালুকার প্রবীণ শিক্ষক মোখলেসুর রহমান আবেগ মেশানো কণ্ঠে বলেন,
“পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতির মেরুদণ্ড। আর ভালুকার বৈশাখী মেলা আমাদের অহংকার। এতদিন পরে আবার এই মেলা ফিরে আসায় আমি সত্যিই আনন্দিত।”
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান,
“বৈশাখ কেবল একটি দিন নয়, এটি বাঙালির আত্মপরিচয়ের উৎস। মেলার মাধ্যমে আমরা চাই মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং ঐক্যের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হোক।”
রঙ, সুর ও হাসিমাখা মুখের মধ্যে ঐতিহ্য রক্ষা
এইবারের মেলায় ফিরে এসেছে সেই চিরচেনা আবহ—রঙ, সুর, ঘ্রাণ আর মানুষের হাসিমাখা মুখ। যেন পাঁচ বছরের সব বিরতি ভেঙে ভালুকা আবারও গেয়ে উঠেছে প্রাণের গান। মেলায় এসেছে সেই পুরনো বৈশাখী রঙ, যা মানুষের মনে অমলিন স্মৃতি রেখে যায়।
সংস্কৃতির জয়গান
ভালুকার বৈশাখী মেলা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি এক অনন্য সাংস্কৃতিক প্রতীক। এটি ভালুকার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির উদযাপন, যেখানে হাজারো মানুষ একত্রিত হয়ে বাঙালি জাতির ঐতিহ্য এবং মনের গভীর অনুভূতিগুলিকে উদযাপন করেছে। আর, এই মেলার মাধ্যমে ভালুকাবাসী আবারও প্রমাণ করেছে—সংস্কৃতি কখনো হারায় না, কেবল সময় নেয় ফিরে আসতে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!