স্টাফ রিপোর্টার - ইমরান হক ।।
জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে 'জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য (৬ মে) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
জানা গেছে, খসড়া অধ্যাদেশে জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যা, ভৌগোলিক ও জাতিগত বৈশিষ্ট্য এবং যোগাযোগ সুবিধার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সীমানা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কোনোভাবেই ইউনিয়ন, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার ওয়ার্ড ভাগ করা হবে না।
এর আগে আইনটির ৪, ৬, ৮ ধারায় অস্পষ্টতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে সংশোধনী আইনের একটি খসড়াও পাঠানো হয়। পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি খসড়াটি পর্যালোচনা করে। এখন উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দিলে অধ্যাদেশ আকারে তা জারি করা হবে।
২০২১ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার আগের অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন আইন জারি করেছিল।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো প্রস্তাবে ইসি জানায়, বর্তমান আইনের ৪, ৬, ৮ ধারায় অস্পষ্টতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক দল ও নেতাদের মধ্যে সংশয় ও আপত্তি রয়েছে। গত জুলাইয়ের গণ-আন্দোলনের পর তা আরও প্রকট হয়।
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সংসদের বিদ্যমান সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জমা পড়ছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ৬৩টি আসনের সীমানা নির্ধারণ চেয়ে ৪০২টি আবেদন জমা পড়েছে।
আইন সংশোধনের পর এসব আবেদন নিষ্পত্তি করে নতুনভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। এতে অন্তত ৬০টি আসনের সীমানা বদলাতে গেলে ১০০টির বেশি আসনের সীমানা পরিবর্তিত হবে।
যে যে ধারা সংশোধনের প্রস্তাব ইসির -
বর্তমান আইনের ৪ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা কোনো কমিশনার বা তার কোনো কর্মকর্তাকে ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে।
এই ধারার পরিবর্তে ইসি প্রস্তাব করেছে, কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্য কোনো কমিশনারকে প্রধান করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করবে।
এ কমিটি প্রয়োজনে ভূগোলবিদ, মানচিত্রকার, পরিসংখ্যানবিদ, জনসংখ্যাবিদ ও নগরপরিকল্পনাবিদদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
ইসির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৬ ধারার বিধান অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণে জনসংখ্যাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ায় শহর এলাকায় সংসদীয় আসন বেড়েছে, আর গ্রাম এলাকায় আসন কমেছে। এতে জণমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থা ও অবস্থানকেও বিবেচনায় রাখতে হবে।
বর্তমান আইনের ৬(২) ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনা করে আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রেখে এবং সর্বশেষ আদমশুমারির জনসংখ্যার বাস্তব বণ্টনের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করবে।
এই ধারা সংশোধন করে নতুনভাবে চারটি ক্লাস্টার যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে ইসি।
সেগুলো হলো—
(ক) প্রশাসনিক সুবিধা ও সীমানার অখণ্ডতা, নদী-পর্বতের অবস্থানসহ অন্যান্য ভৌগোলিক ও জাতিগত বৈশিষ্ট্য এবং যোগাযোগ সুবিধা বজায় রাখা।
(খ) সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদন ও হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা অনুসরণ করা।
(গ) পল্লী অঞ্চলে ইউনিয়ন এবং শহর অঞ্চলে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ওয়ার্ড বিভক্ত না করা।
(ঘ) পার্বত্য তিন জেলা—রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িকে পৃথক তিনটি আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে গণ্য করা।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন শতাধিক আসনের সীমানা বদলেছিল। পরে কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ৫০টি, কে এম নূরুল হুদা কমিশন একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫টি এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ১২টি আসনে সীমিত পরিসরে পরিবর্তন এনেছিল। তার আগেও ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালে ৩৩টি আসনের সীমানা পরিবর্তন হয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!