আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দ্রুত নির্বাচন দিতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারও নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ডিসেম্বর বা আগামী বছরের মার্চে নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট গঠনের আলোচনা শুরু হয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় তিনটি জোট গঠন করেই দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। বিএনপির নেতৃত্বে ১৯ দল, জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বে ১১ দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে আরও একটি জোট গঠিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে একসময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।
বিএনপির নেতৃত্বে ১৯ দলের সম্ভাব্য জোট
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির নেতৃত্বে ১৯টি দল নিয়ে একটি শক্তিশালী জোট গঠিত হতে পারে। এসব দলে রয়েছে—
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাকের পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণফোরাম, ন্যাপ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নেতৃত্বাধীন ১২ দলীয় জোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংসদীয় আসন ভাগাভাগির হিসাব মেলাতে পারলে মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন এবি পার্টিও শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন ঘনিয়ে এলে জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এখনই কিছু বলা কঠিন।’
জামায়াতের সম্ভাব্য ১১ দলীয় জোট
জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা জোট গঠনের পরিকল্পনাও করছে। সম্ভাব্য জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে—
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।
এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আমরা দলগতভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরিস্থিতি বুঝে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেব।’
ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির সম্ভাব্য জোট
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি চলছে। তাদের নেতৃত্বেও একটি জোট গঠিত হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোট হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এ প্রসঙ্গে এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেইনি। বিএনপির সঙ্গে যাওয়া, এককভাবে নির্বাচন করা বা নতুন একটি জোট গঠন—এই তিনটি বিকল্প আমাদের সামনে রয়েছে।’
রাজনৈতিক সমীকরণ কী বলছে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নতুন জোট আসন্ন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ক্ষমতায় যেতে হলে বিএনপিকে ছাড় দিয়ে হলেও দলগুলোকে একত্রিত করতে হবে। অন্যদিকে, জামায়াতও শক্ত অবস্থানে থেকে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইছে।
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—শেষ পর্যন্ত কারা কাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে নামবে? আগামী কয়েক মাসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!