এইচ এম আরিফ হোসেন//
চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদীর সি এন জি চালক শরীফ হত্যার রহস্য নিয়ে নিয়মিত ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হলে এবার টনক নড়ে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের। সরাসরি পুলিশ সুপার আব্দুর রকিব পিপিএম এর নির্দেশে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বাহার মিয়া'র তত্ত্বাবধানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিএনজি চালক শরীফ হত্যাকান্ডের এজাহারভুক্ত দ্বিতীয় আসামি সুমন পাটোয়ারীকে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
৩ জানুয়ারী শুক্রবার ভোর রাতে এস আই নাজমুল হক , এএসআই আতাউর রহমান ও সঙ্গীয় ফোর্স খুলনা বাগেরহাটে অভিযান চালায়। এ সময় আধুনিক প্রযুক্তি অবলম্বন করে পুলিশ খুলনা জেলার দাকোপ থানাধীন বানিশান্তা বাজার এলাকা থেকে হত্যা মামলার ২য় আসামী মোঃ সুমন পাটোয়ারী কে গ্রেফতার করে চাঁদপুর নিয়ে আসে।
গত ৩০ শে নভেম্বর রাত ৯ ঘটিকায় সিএনজি চালক শরীফ কে পাওনা ১১ হাজার টাকার জন্য ঢালিঘাট বাজার থেকে ফিল্মি স্টাইলে তুলে এনে বাগাদী চৌরাস্তা সিএনজির গ্যারেজে আটকে রেখে মেরে ফেলে।এই ঘটনায় পুলিশ সিএনজি চালক শরিফকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করলেও অভিযুক্ত আসামি রাসেল ও সুমন পালিয়ে যায়। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর অবশেষে পুলিশ মামলা দ্বিতীয় আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পুলিশের হাতে আটক হওয়া সুমন পাটোয়ারী
৮নং বাগাদি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আবুল কাশেম পাটোয়ারীর ছেলে। সুমন পাটোয়ারী বাগাদি চৌরাস্তায় মামলার প্রধান আসামি রাসেলের সিএনজি গ্যারেজে মেকানিক হিসেবে চাকরি করতেন।
এই ঘটনায় মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া জানান, সিএনজি চালক শরীফকে তুলে এনে গ্যারেজে আটকে রাখার পর ঝুলন্ত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। এই ঘটনায় মৃত শরীফের পিতা বাদী হয়ে দু'জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার আসামিরা দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর অবশেষে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা বাগেরহাট শেষ প্রান্ত থেকে সুমনকে আটক করতে সক্ষম হয়। মামলার প্রধান আসামি রাসেলকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ চেষ্টা করে যাচ্ছে। মামলার গ্রেফতারকৃত আসামি সুমনের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। অধিকতর তদন্ত শেষে এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে জানায়।
নিহত শরিফের বাবা সহ তার পরিবারের লোকজন বলেন, ১১ হাজার টাকার জন্য শরীফকে আটকে রেখে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই । এই ঘটনায় দ্বিতীয় আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। তবে খুব দ্রুত প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করার করজোড়ে দাবি জানান।
জানা যায় ব্রাহ্মান সাখুয়ার তালুকদার বাড়ির শরীফ তালুকদার গত তিন মাস ধরে বাগাদী চৌরাস্তা মাস্টার মার্কেটের পাটর্স ব্যবসায়ী রাসেল গাজী (২৮) এর সি এন জি ভাড়ায় চালাতো। সি এন জি চালাতে গিয়ে শরীফ তালুকদার ১১ হাজার টাকা রাসেল গাজীর নিকট দেনা হন। এই দেনার টাকার জন্য দু পক্ষের উপস্থিতে এলাকার গন্যমান ব্যক্তির মধ্যস্থতায় ১০ ডিসেম্বর রাসেলের পাওনা টাকা পরিশোধ করার ব্যাপারে সিধান্ত হয়
কিন্তু নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত না হতেই মাদকাসক্ত রাসেল গাজী মাদক কেনার জন্য তার দোকানের মেকানিং সুমন পাটোয়ারী (৩৫) কে সঙ্গে নিয়ে রাসেল গাজীকে ৩০ নভেম্বর রাত ৯ ঘটিকায় ঢালীঘাট এলাকা থেকে জোরপূর্বক মোটর সাইকেলে উঠায়।
ঢালীঘাট এলাকার লোকজন বাঁধা দিলেও রাসেল গাজী ও সুমন পাটোয়ারী কাউকে কোন তোয়াক্কা না করে শরীফকে মারধোর করে বাগাদী চৌরাস্তা মাস্টার মার্কেটে রাসেলের গ্যারেজে নিয়ে আসে। এই সময় রাসেল গাজী ও সুমন শরীফকে মারধোর করে রাসেল গাজী শরীফের ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটির কাছে ফোন করে বলে ৩ হাজার টাকা মিলিয়ে দিতে, তা না হলে তার স্বামীকে আটক করে রাখবে। শরীফের স্ত্রী বিউটি রাত্রের মধ্যেই ৩ হাজার টাকা মিলিয়ে রাসেল কে কল করে বলে সে ৩ হাজার টাকা সকালে নিয়ে আসবে আর না হলে রাতে রাসেল লোক পাঠালে তার নিকট দিবে।
আর বাকী টাকা আগামী ১০ ডিসেম্বর দিয়ে দিবে বলে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। ভোররাত অনুমান ৫ ঘটিকার সময় ওয়ার্ড মেম্বার মনির এর মাধ্যমে শরীফের মৃত্যুর খবর জানতে পারে তার পরিবারের লোকজন। শরীফের পরিবারের লোকজন তৎক্ষনাৎ ঘটনা স্থলে ছুটে গিয়ে দেখে তার মৃত দেহ মাটিতে পড়ে আছে। কয়েক জন পুলিশ ঘটনা স্থলে উপস্থিত রয়েছে। পরে পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যায়। ময়নাতদন্তের শেষ লাশ হস্তান্তর করলে ব্রাহ্মান সাখুয়া শরীফের নানার বাড়িতে ১ লা ডিসেম্বর রাত ১১ ঘটিকায় দাফন সম্পূর্ণ করা হয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!