কাঠমাণ্ডু/ঢাকা থেকে রিপোর্টার
নেপালে উগ্রবিক্ষোভে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক নানা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন—কাঠমাণ্ডুর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এক বাংলাদেশি পরিবার মারধর ও লুটের শিকার হয়েছেন এবং বিমানবন্দরগামী এক বাসে আগুন লাগায় এক নারী পর্যটকের পাসপোর্ট ও বেশ কিছু ব্যক্তিগত জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ—
- মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভকারীরা একটি পাঁচ তারকা হোটেলে প্রবেশ করে সেখানে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক আবু ইউসুফ ও তার পরিবারকে মারধর করে। হামলাকারীরা মার্কিন ডলার ও স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৮ লাখ টাকার নগদ ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নেয়। ইউসুফের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরির কোপের ক্ষত পাওয়া গেছে।
- একই দিন ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পথে বিক্ষোভকারীরা যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন ধরায়; বাসটিতে থাকা এক বাংলাদেশি নারী পর্যটকের পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন ও ব্যক্তিগত সামগ্রী সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। পরে তিনি একজন নেপালি নাগরিকের সহায়তায় নিরাপদে আশ্রয় নেন এবং দূতাবাসের উদ্যোগে হোটেলে রাখা হয়।
- জাতীয় ফুটবল দলের সংগে সমন্বয়ক হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি একজন কূটনৈতিক কর্মকর্তা জানান, বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশের কূটনৈতিক গাড়িটি কিছুটা সমস্যায় পড়ে—কিছু বিক্ষোভকারী গাড়ির ক্ষতি করার চেষ্টা করলে অন্যরা গাড়িটি সরিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের উদ্যোগে উদ্ধার অভিযান
নেপালে পরিস্থিতি অবনতির পর বাংলাদেশ দূতাবাস দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অন্তত ৩০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে নিরাপদ হোটেলে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সমন্বয়ে বিশেষ ও নিয়মিত ফ্লাইটে দেশে ফেরানো হয় মোট পড়শি ৩০০ জনের মতো নাগরিক—যাদের মধ্যে বিশেষ বিমানে ৫৫ জন দেশে পৌঁছে; এদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়, কোচ ও ক্রীড়া সাংবাদিকরা। উদ্ধার অভিযানে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন বলে জানানো হয়েছে।
দূতাবাস সতর্ক ও কল সেন্টারের আহ্বান
কাঠমাণ্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এখনও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। দূতাবাস নেপালে থাকা সকল বাংলাদেশিকে কনসুলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ রাখার আহ্বান জানিয়ে has provided helpline contact details (উল্লেখিত সূত্র অনুযায়ী)। বিপদসংকেত পেলে দ্রুত দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারের প্রতিশ্রুতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ
উদ্ধার অভিযানের সাফল্য নিশ্চিত করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নেপালের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক ও সামরিক সমন্বয় দ্রুত কার্যকর হওয়ায় বিপর্যস্তদের দ্রুত উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
নেপালের রাজনৈতিক সহিংসতা অব্যাহত থাকায় ঢাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস পর্যবেক্ষণ অব্যহত রেখেছে। যে সকল বাংলাদেশির ব্যক্তি ও জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—তারা নিকটস্থ কনসুলার অফিসে যোগাযোগ করে সহায়তা সম্পর্কে নির্দেশ গ্রহণ করতে পারবেন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!