ঢাকা, ৩ আগস্ট ২০২৫
যাত্রীসংখ্যা এবং রাজস্ব আয়ে ঊর্ধ্বমুখী হলেও রাজধানীর মেট্রোরেল এখনো নিজস্ব আয়ে দৈনন্দিন খরচ চালাতে পারছে না। বিদ্যুৎ, নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এমনকি ঋণের সুদ পরিশোধেও ভরসা করতে হচ্ছে প্রকল্পের টাকায়। অথচ এই অর্থ বরাদ্দ ছিল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ বলছে, এ অর্থ 'ধার' হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে ফেরত দেওয়া হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা একে অনিয়ম বলেই দেখছেন।
গত দুই অর্থবছরে মেট্রোরেল পরিচালনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যয় হয় ১২৪ কোটি এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৫ কোটিতে। অথচ প্রকল্প তহবিল থেকে এসেছে ১৪৮ কোটি টাকার বেশি।
আয় বাড়লেও কেন এমন হচ্ছে? বিশ্লেষকদের মতে, এই পদ্ধতি নৈতিক ও কাঠামোগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। বুয়েটের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, “প্রকল্পের টাকা দিয়ে পরিচালন ব্যয় মেটানো অনুচিত। এতে ভবিষ্যতে সুদের উপর সুদ দিতে হতে পারে।”
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদও স্বীকার করেছেন এই পরিস্থিতি। তিনি জানান, বর্তমানে একটি ‘ট্রানজিশনাল পিরিয়ড’-এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি, তাই সাময়িকভাবে প্রকল্পের অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, মেট্রোরেলের আয়ও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যেখানে আয় ছিল ২৭৩ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৪৪৬ কোটি টাকা। অধিকাংশ আয় এসেছে যাত্রী ভাড়া থেকেই।
বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলা মেট্রোর দৈর্ঘ্য ২০.১০ কিলোমিটার। গড়ে প্রতিদিন চার লাখ যাত্রী এই রেলপথে চলাচল করছে। চলমান রয়েছে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার বর্ধিতাংশের নির্মাণকাজও, যার অগ্রগতি ইতোমধ্যে ৫৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া জানান, এই অংশ যুক্ত হলে মোট স্টেশন হবে ১৭টি। মূল্যস্ফীতি ও অবকাঠামো সম্প্রসারণের কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় এখন দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা, যা প্রাথমিক বাজেটের চেয়ে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি।
সরকারি তহবিল ও জাইকার সহায়তায় এগিয়ে চলা এই প্রকল্প নিয়ে আশা যেমন আছে, তেমনি প্রশ্নও উঠছে ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিয়ে। এখন দেখার বিষয়, ডিএমটিসিএল কীভাবে এই 'ধার' শোধ করে এবং লাভজনক পথে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে যেতে পারে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!