আজকের দিনে ইরান ও ইসরায়েলকে পরস্পরের চরম শত্রু হিসেবে দেখা হলেও, একসময় এই দুই দেশ ছিল ঘনিষ্ঠ মিত্র। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়—রাজনৈতিক, সামরিক এবং গোয়েন্দা সহযোগিতায়ও একসময় পাশে ছিল তারা। কিন্তু ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর পরিস্থিতি এমনভাবে বদলে যায়, যে বন্ধুত্ব রূপ নেয় চরম শত্রুতায়।
একসময় মিত্র, এখন চিরবৈরি
ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫০ সালে তুরস্কের পর ইরানই ছিল দ্বিতীয় মুসলিম দেশ, যারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। তখনকার ইরানের শাহ সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, আর সে কারণে ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে।
ইরান যখন ১৯৫৭ সালে নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থা সাভাক গঠন করে, তখন ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সরাসরি সহযোগিতা করে। সেই সময়কার ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক ছিল কৌশলগত এবং গভীর।
বিপ্লব বদলে দেয় সমীকরণ
১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বে ইরানে ঘটে ইসলামি বিপ্লব। নতুন সরকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে এবং তেহরানে ইসরায়েলের দূতাবাসকে রূপান্তর করে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে। এখানেই ভাঙন শুরু।

ইরান এখন ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে ‘দখলদার শক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের এই অবস্থানকে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে আসছে।
সামরিক উত্তেজনা ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা
পরমাণু কর্মসূচি এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে ইরানের অগ্রগতিকে ইসরায়েল সবসময় ভয়ভীতি ও হুমকি হিসেবেই দেখে। এর জেরে ইসরায়েল একাধিকবার ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা এবং গোপন প্রকল্পে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত।
অন্যদিকে, ইরান লেবাননের হেজবুল্লাহ, গাজার হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের মতো মিলিশিয়াদের সহায়তা দিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়া ও লেবাননে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেও ইসরায়েলের জন্য চাপ বাড়াচ্ছে ইরান।
ইসরায়েল কেন ভয় পায় ইরানকে?
বিশ্লেষকরা বলেন, ইরান যেমন আয়তনে ও জনসংখ্যায় বিশাল, তেমনই সামরিক শক্তিতেও প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে। ইসরায়েল ছোট একটি দেশ—একটি সর্বাত্মক হামলায় বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে সবসময়।
যুদ্ধ কি আসন্ন?
বর্তমানে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আবারো আলোচনায় এসেছে ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক। ইরান সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধা থাকলেও তেহরান যে ছায়াযুদ্ধে জড়িত, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। হেজবুল্লাহ বা অন্যান্য গোষ্ঠীর মাধ্যমে ইসরায়েলকে চাপে রাখছে ইরান।
তবে, বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যতই বাড়ুক, উভয় দেশ সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর আগে শতবার ভাববে। কারণ, এই যুদ্ধ কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়বে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!