উত্তর কোরিয়ার সর্বাধিনায়ক কিম জং–উন আবারও আলোচনায় তাঁর চিরচেনা সবুজ রঙের ব্যক্তিগত ট্রেনকে ঘিরে। সোমবার পিয়ংইয়ং থেকে বেইজিংয়ের পথে রওনা হওয়া এই বুলেটপ্রুফ ট্রেন শুধু নিরাপত্তার জন্যই নয়, বরং ভেতরের বিলাসবহুল সাজসজ্জা ও নানা সুবিধার জন্যও সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
বিশেষভাবে নকশা করা এই ট্রেনে রয়েছে কিমের ব্যক্তিগত শয়নকক্ষ, আধুনিক কার্যালয়, যোগাযোগ সরঞ্জাম, রেস্তোরাঁ, নিরাপত্তাকর্মীদের কামরা, এমনকি দুটি সাঁজোয়া মার্সিডিজ গাড়ি রাখার ব্যবস্থাও। দক্ষিণ কোরীয় বিশেষজ্ঞ আন বিয়ং–মিন জানান, প্রতিটি ট্রেনে ১০ থেকে ১৫টি কামরা থাকে এবং নিরাপত্তার জন্য একাধিক ট্রেন একসঙ্গে ব্যবহৃত হয়।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাম্প্রতিক ছবিতে দেখা গেছে, কাঠের প্যানেল দেওয়া কক্ষে বসা কিমের টেবিলে রাখা ছিল সোনালি অক্ষরে খোদাই করা ল্যাপটপ, কয়েকটি টেলিফোন, সিগারেটের বাক্স আর নীল–স্বচ্ছ তরলভর্তি বোতল। জানালায় ঝোলানো ছিল নীল–সোনালি রঙের পর্দা। এক পর্যায়ে সবুজ কামরার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতেও দেখা যায় তাঁকে।

ট্রেনটির ইতিহাসও কম আকর্ষণীয় নয়। কিম জং–উনের দাদা কিম ইল–সুং নিয়মিত ট্রেনে ভ্রমণ করতেন। আর তাঁর বাবা কিম জং–ইলও তিনবার রাশিয়া সফরে এই ট্রেন ব্যবহার করেন। ২০০১ সালে এক সফরে তিনি ২০ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন। এমনকি ২০১১ সালে এক ট্রেনযাত্রার মধ্যেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
সীমান্ত অতিক্রম করার সময়ও বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। রাশিয়ায় যাওয়ার সময় ট্রেনের চাকা বদলাতে হয়, কারণ রেললাইনের মাপ আলাদা। তবে চীনে প্রবেশ করলে স্থানীয় লোকোমোটিভ ট্রেনটিকে টেনে নিয়ে যায়। গত সফরে চীনের তৈরি সবুজ ডিএফ১১জেড লোকোমোটিভে কিমের ট্রেন চলতে দেখা যায়।
উত্তর কোরিয়ার প্রচারণায় এই দীর্ঘ ট্রেনযাত্রাকে জনগণের সঙ্গে কিম পরিবারের যোগাযোগের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এক সফরে কিমকে ভুট্টাক্ষেতে ঘুরে দেখতে দেখা যায়, আবার কখনো সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে দেখা যায়।
নিরাপত্তা, বিলাসিতা আর প্রচারণা—সব মিলিয়ে কিম জং–উনের এই ট্রেন হয়ে উঠেছে উত্তর কোরীয় ক্ষমতার অনন্য প্রতীক।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!