বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি আগামীতে এমন একটি সংসদ চায় যেখানে থাকবে প্রাণবন্ত বিতর্ক, শক্তিশালী বিরোধী দল এবং জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন। প্রতিশোধের রাজনীতি নয়, সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ার লক্ষ্যেই বিএনপি এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে আমীর খসরু আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রতিহিংসার বদলে সহনশীলতার চর্চা করবে। ভিন্নমতকে সম্মান জানাবে এবং রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে শত্রুতায় পরিণত করবে না।
রাজনীতিতে প্রতিশোধের জায়গা নেই
আমীর খসরু সাফ জানিয়ে দেন, "যদি প্রতিশোধের রাজনীতিতে যাই, তাহলে তো শেখ হাসিনার বিদায়ের প্রয়োজন হতো না। বিএনপি চাইছে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে, যাতে দেশ সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যায়—রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে।"
সংস্কারের মূলধারা বিএনপি
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে সব বড় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি। একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মুক্তবাজার অর্থনীতি—এসবই বিএনপির অবদান। বিএনপির দেওয়া ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
সংস্কার প্রশ্নে জামায়াত বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে বিএনপির বিরোধ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আমীর খসরু বলেন, “যখন কিছুই থাকে না, তখন মানুষ কৃত্রিম ইস্যু তৈরির চেষ্টা করে। বিএনপি বহু আগেই সংস্কারের পথ দেখিয়েছে।”
লন্ডনে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ
সম্প্রতি লন্ডনে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমীর খসরু এটিকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলে উল্লেখ করেন। তবে কোনো নীতিগত আলোচনা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাননি।
ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব
আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী বিএনপি। আমীর খসরু বলেন, "রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার হয়ে গেলে ডিসেম্বরের অনেক আগেই নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত বলছে, তাহলে দেরি হওয়ার কারণ দেখি না।"
ভবিষ্যতের সংসদ এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক
ভবিষ্যতের সংসদ সম্পর্কে আমীর খসরুর মন্তব্য, "আমরা চাই একটি সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক সংসদ হোক। শক্তিশালী বিরোধী দল থাকুক, যাতে জনগণের কথা উঠে আসে।" ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, "ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি সব সময়ই মাল্টিলেটারাল ছিল, ভবিষ্যতেও তাই থাকবে।"
দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর বিএনপি
মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিএনপি কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান আমীর খসরু। তিনি বলেন, "দুই হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে দলে অনিয়মের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গেছে, তা মেনে নিয়ে বিএনপি ইতিবাচক পরিবর্তনের চেষ্টা করছে।"
নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা
অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সতর্কবাণী উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, বিএনপি বুঝেছে, ব্যক্তি বা দলের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্র পরিচালনায় আন্তরিকতা জরুরি। ভুলত্রুটি মেনে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!