আস্থাভাজন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সাম্প্রতিক নানা বিতর্ক ও আলোচিত ইস্যুতে প্রথম আলোকে দেওয়া এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে খোলামেলা মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, "আমার বাবার ঠিকাদারির লাইসেন্স নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও এটা কোনো অপরাধ নয়। এটা একজন নাগরিকের অধিকার। যেহেতু লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো কাজ নেওয়া হয়নি, তাই এটি স্বার্থের সংঘাতের মধ্যেও পড়ে না।"
তিনি জানান, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বাবার আবেদনের ভিত্তিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওঠা প্রশ্ন—এত দ্রুত লাইসেন্স পাওয়ার পেছনে প্রভাব ছিল কি না—এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “লাইসেন্সটি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে হয়েছে। বিষয়টি সেখানেই নিষ্পত্তিযোগ্য। আমি আনফিশিয়ালিও এ বিষয়ে জানতাম না।”
সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেমকে ঘিরে তদন্তের অনুরোধ
সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়ে উঠা অনিয়ম ও বদলি-বাণিজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, “তিনি নিজেই পদত্যাগ করেন এবং মন্ত্রণালয় তা গ্রহণ করেছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে, সে বিষয়ে আমরা দুদককে তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমাদের মন্ত্রণালয়ে তিনি এখন কর্মরত নন, তাই আমরা অভ্যন্তরীণ তদন্ত করতে পারছি না। দুদক এ বিষয়ে স্বতন্ত্র তদন্ত করলেই প্রকৃত তথ্য উঠে আসবে।”
এলজিইডি প্রকৌশলী নিয়োগ নিয়ে জবাব
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তির (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী পদে তৃতীয় ব্যক্তি নিয়োগ নিয়ে সমালোচনার জবাবে উপদেষ্টা জানান, “বোর্ডের সুপারিশে নিয়োগ হয়েছে। প্রথম দুইজনের মেয়াদ ছিল অল্পদিনের। বোর্ড সুপারিশ করায় আমরা তা অনুমোদন করেছি।”
ডেঙ্গু ও ওয়াসার পানিতে পোকা: ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার
ডেঙ্গুর প্রকোপ ও ওয়াসার পানিতে পোকা পাওয়া প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, “ঢাকা ওয়াসার সরাসরি পানিতে পোকা নেই। সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘদিন ট্যাংক পরিষ্কার না করায়। আমরা জনসাধারণকে ট্যাংক পরিষ্কার রাখতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। পাশাপাশি ডেঙ্গু মোকাবেলায় লার্ভা ধ্বংসকারী প্রযুক্তি আনার পরিকল্পনা চলছে।”
রাজনৈতিক চাপ, অভিযোগ আর বাস্তবতা
কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপির অভিযোগ—উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করছেন—এ প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমার স্বার্থ রাজনৈতিক নয়, বরং উন্নয়নের দিকে। সেখানে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, মাদক ইত্যাদি রোধে কাজ করা হচ্ছে। যেটা কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিজেদের বিপক্ষে মনে করছে।”
তিনি জানান, চাঁদাবাজি রোধে পুলিশ একটি মামলা করে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করে। অথচ বিএনপি এটাকে রাজনৈতিক নিপীড়ন বলে চালানোর চেষ্টা করছে।
নির্বাচন ও সংস্কার: ঐকমত্যই এখন মূল চ্যালেঞ্জ
স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সরকার একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ থাকায় সময় নিচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা যা বলেছেন, আমরা তা অনুসরণ করছি।”
সংস্কার প্রশ্নে তিনি বলেন, “৬০-৭০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যেমন দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া বা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। ঐক্যমত্য না হলে কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র ও উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!