ইমরান ইমন বাংলাদেশের আলোচিত শিক্ষায় ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন (No VAT on Education) এর অন্যতম একজন সংগঠক। স্কুল জীবনে তিনি আবৃত্তি, গান ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন Man for Men, এবং প্রতিষ্ঠাকালিন আহবায়ক এর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের তিনি প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে "আসুন পরিবর্তনের রাজনীতি করি" আহবান করে সুস্থ রাজনৈতিক চিন্তার মানুষদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। এবং এর মাধ্যমেই তাঁরা নতুনভাবে রাজনৈতিক পথ চলা শুরু হয়।
এরপর তিনি অংশ নেন Peoples Power Movement এর সাথে, যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রচিন্তা নামে কার্যক্রম শুরু করে। রাষ্ট্রচিন্তা প্রস্তাবিত রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনীতি প্রচারের জন্য তিনি দেশব্যাপী সফর শুরু করেন। একই সাথে বাংলাদেশে তৎকালীন চলমান প্রায় সকল আন্দোলন সংগ্রাম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন জোরালো ভাবে শুরু হলে তিনি "উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ" এর ব্যানারে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন।
একই ভাবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন, গাইবান্ধার আদিবাসীদের ভূমি উদ্ধার আন্দোলন, চুনারুঘাটের চা শ্রমিকের আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ২০১৮ সালে ভয়ংকর কারচুপির জাতীয় নির্বাচনের পরে রাষ্ট্রচিন্তা আন্দোলনের মাঠে ভাসানী অনুসারী পরিষদ, ছাত্র-যুব অধিকার পরিষদ ও গণসংহতি আন্দোলন এর সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করলে রাষ্ট্রচিন্তা'র প্রতিনিধি হিসেবে যুব অধিকার পরিষদ এর প্রতিষ্ঠাকালিন যুগ্ন আহবায়ক এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রচিন্তার একটিভিস্টদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হলে তিনি যুব অধিকার পরিষদ ছেড়ে পুন:রায় রাষ্ট্রচিন্তার দায়িত্বভার গ্রহন করেন। ২০২২ সালের ৭ আগষ্ট, করোনার ভয়াবহ সংকটের মধ্যে এক অনলাইন প্রতিনিধি সভার মাধ্যেমে "রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন" নামে রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সে সময় এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত কাইয়ূম, সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন ও ইমরান ইমন দেশবাসীর কাছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। এবং প্রতিষ্ঠাকালিন জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য ও নির্বাহী কমিটি গঠন করা হলে তাঁর উপর সংগঠনিক সমন্বয়কের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়।
২০২৩ সালের ৮ আগষ্ট "গণতন্ত্র মঞ্চ" নামে রাজনৈতিক জোট গঠন করা হলে তিনি জোটের কেন্দ্রিয় পরিচালনা কমিটির দায়িত্ত্ব গ্রহণ করেন। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণতন্ত্র মঞ্চের হয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন, রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার ও ভোটাধিকারের দাবীতে চলমান আন্দোলনে তিনি সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দেন। এসময় তিনি সরকারী দল ও বিভিন্ন বাহিনী দ্বারা বার বার হামলা বাধার সম্মুখীন হন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ভোটারবিহীন ডামী নির্বাচনের মধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হলে ভোট বাতিল ও পূনঃনির্বাচনের দাবিতে মাঠের আন্দোলনে তিনি সক্রিয় নেতৃত্ত্ব দান করেন। ২০২৪ এর জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহনের পাশপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত রাখতে সমন্বয় করেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামর্থনে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলের পক্ষের কর্মসূচিতেও নেতৃত্ত্ব দান করেন। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত জুলাই গণঅভ্যুথানের অন্যতম রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি গুরুত্ত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের খেয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি তে কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ইমরান ইমন রাজশাহী জেলার অন্তর্গত বাঘা উপজেলার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো: ইয়াকুব আলী একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মাতা মোসা: আফিরা বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। এক কন্যা সন্তানের জনক, তার স্ত্রী একজন সরকারি কর্মকর্তা। ইমরান স্থানীয় প্রথমিক বিদ্যালয়ে, স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেন। এর পর তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বর্তমানে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় পড়াশোনা করছেন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!