বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘বাসন্তিক’ কনসার্টে গাইতে গিয়ে একদল লোকের হামলার মুখে পড়েছে জনপ্রিয় ব্যান্ড কৃষ্ণপক্ষ। ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চ ছাড়ার আগমুহূর্তে হঠাৎ উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
আয়োজক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা সংসদ কনসার্টের আয়োজন করেছিল।
ব্যান্ডটির পক্ষ থেকে ফেসবুকে জানানো হয়েছে, রাত ১২টা ৫০ মিনিটের পর প্রায় আড়াই ঘণ্টা তারা ঘন জঙ্গলের একটি ছোট জায়গায় লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পরদিন সকালে ঢাকায় ফেরেন তারা।
কি ঘটেছিল সেই রাতে?
কৃষ্ণপক্ষ জানায়, কনসার্টের শুরুতে সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। একের পর এক গান পরিবেশন করছিলেন তারা। তবে শেষ গান ‘ভাঙা সাইকেল’ পরিবেশন শেষে মঞ্চ থেকে নামার আগেই একদল উগ্র লোক তাদের দিকে তেড়ে আসে।
ব্যান্ডের ভাষ্য, “মঞ্চের বিপরীত দিক থেকে উন্মত্ত চিৎকার ও গালাগাল শোনা যাচ্ছিল। আয়োজকদের চোখেমুখে আতঙ্ক ছিল স্পষ্ট। কিছুক্ষণ পর একদল লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে চেয়ারে ভাঙচুর শুরু করে ও মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসে। এদের সাধারণ শিক্ষার্থী মনে হয়নি, বরং পেশিশক্তি প্রদর্শনের জন্য একত্রিত হওয়া একটি গোষ্ঠী বলে মনে হয়েছে।”
জীবন বাঁচাতে জঙ্গলে আশ্রয়
হামলার আশঙ্কা বুঝতে পেরে আয়োজকরা দ্রুত ব্যান্ড সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে যান। তাড়াহুড়োয় গিটার, ফোন ও ব্যাগসহ অনেক কিছু রেখে যেতে হয় তাদের। এরপর কৃষ্ণপক্ষের সদস্যরা গাড়িতে ওঠে এবং রাতের আঁধারে ঘন জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে থাকেন।
তাদের ভাষায়, “গাড়ির হেডলাইট বন্ধ, আমরা কথা বলা বন্ধ করে দিই। নিশ্বাস বন্ধ রাখলেই যেন ভালো হতো, যাতে কেউ আওয়াজ শুনে আমাদের খুঁজে না পায়।”
পরবর্তীতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর সহায়তায় রাত ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন কৃষ্ণপক্ষের সদস্যরা।
আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও আয়োজক চারুকলা সংসদের সদস্যরা পুরো সময় কৃষ্ণপক্ষের পাশে ছিলেন। ব্যান্ডটি আয়োজকদের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করে জানায়, “তারা আমাদের এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে যাননি। আমাদের নিরাপত্তার জন্য তারা সবসময় পাশে ছিলেন। তাদের অনুতপ্ত মুখ দেখে আমাদেরও কষ্ট লেগেছে।”
এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে এ ধরনের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!