হাসপাতালে মুমূর্ষু মা, সামনে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা—এইচএসসি। মাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে দৌড়ে কেন্দ্রের সামনে পৌঁছালেও ততক্ষণে পার হয়েছে নির্ধারিত সময়। চোখে অশ্রু, মুখে আকুতি—তবুও প্রবেশের অনুমতি মেলেনি আনিসার। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা।
ঘটনার ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সবার মুখে এখন একটাই প্রশ্ন—"আইনের চেয়ে কি মানবিকতা ছোট?" মেয়েটির এই পরিস্থিতি নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো জাতির মন।

‘আয়েশা’ নয়, প্রকৃত নাম ‘আনিসা’
প্রথমে গণমাধ্যমে পরিচিত হন ‘আয়েশা’ নামে। পরে জানা যায়, তার প্রকৃত নাম আনিসা। তিনি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার দিন সকালে মায়ের অসুস্থতার কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায় দেড় ঘণ্টা।
শত অনুরোধেও কেন্দ্রের গেট খোলেনি তার জন্য। কারণ, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পর কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না—এটাই নিয়ম।
আইন বনাম মানবিকতা
‘পাবলিক পরীক্ষা আইন ১৯৮০’ অনুযায়ী, বিশেষ কারণ দেখালেও পরীক্ষার ৩০ মিনিট পর কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। নিয়ম ভাঙলে কেন্দ্র সচিবের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে।
তবে প্রশ্ন উঠছে, ‘মানুষের জন্যই তো আইন’—এমন মানবিক পরিস্থিতিতে কি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নেওয়া যায় না?
বিশেষ বিবেচনায় সরকার
আনিসার ঘটনার পর বিষয়টি আমলে নেয় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, আনিসার বিষয়টি “বিশেষ বিবেচনায় দেখা হচ্ছে”।
তবে শিক্ষা বোর্ড বলছে, এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেয়নি। ফলে পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।
সম্ভাব্য দুই সমাধান
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক কামাল উদ্দিন হায়দার জানান,
১. বাংলা দ্বিতীয়পত্রে ভালো নম্বর পেলে তা থেকেই ফলাফল দেওয়া যেতে পারে।
২. পরীক্ষা শেষে আলাদা করে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে, যদি মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ আসে।
আইনি জটিলতার আশঙ্কা
শিক্ষা বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, “আনিসাকে সুযোগ দিলে” অন্যান্যরা আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেন। এতে পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে সৃষ্ট হতে পারে জটিলতা।
বর্তমানে আনিসার অবস্থা
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আনিসা মানসিকভাবে ট্রমায় ভুগছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে আপাতত প্রস্তুত নয় তার পরিবার। কলেজ থেকে তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যেন দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেয়।
চলতি বছরের পরিসংখ্যান
এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী। প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিলেন ১৯,৭৫৯ জন, আর বহিষ্কার হয়েছেন ৪৩ জন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!