চাঁদপুর সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার সাত বছর পেরোলেও প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ভবন নেই। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, লাইব্রেরি কিংবা আধুনিক ল্যাবরেটরির সুবিধা। ছাত্রছাত্রীদের থাকার জন্য নেই হোস্টেল। এর মধ্যেই ১১টি কক্ষ নিয়ে কোনো রকমে চলছে শিক্ষাদান।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রতিষ্ঠিত এই মেডিকেল কলেজে বর্তমানে ২৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ বছর আরও ৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে যাচ্ছেন। তবে, প্রতিষ্ঠানটির ভৌত ও শিক্ষার পরিবেশের ঘাটতির কারণে একদল নবীন চিকিৎসক প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেলা নাজনীন জানান, “এখানে মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি করা কঠিন। জায়গার সংকট এমন যে, সব শিক্ষক একসঙ্গে বসতে এলেও সমস্যা দেখা দেয়।” কলেজে অ্যানাটমি, ফার্মাকোলজি, ফরেনসিক মেডিসিনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের জন্য কমনরুম, ক্যানটিন বা খোলামেলা জায়গার অভাব তাদের ক্লাস শেষে বিশ্রাম বা আড্ডার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত করছে। প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রী বলেন, “আমরা হাতে-কলমে শিখতে পারছি না। প্রয়োজনীয় ল্যাব কিংবা শিক্ষক নেই।”
১১ কক্ষের মেডিকেল কলেজ
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ চাঁদপুর সদর হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ১১টি কক্ষ নিয়ে চালানো হচ্ছে। সেখানে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষকদের জন্য মাত্র কয়েকটি কক্ষ, দুটি শ্রেণিকক্ষ এবং প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ল্যাবরেটরি রয়েছে। লাইব্রেরি বলতে শুধুমাত্র কয়েকটি টেবিল-চেয়ার।
শিক্ষকের সংকট প্রকট
অ্যানাটমি বিভাগের একজন অধ্যাপক নেই। সার্জারি বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক দায়িত্ব পালন করছেন। ফার্মাকোলজি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য। অন্য বিভাগগুলোতেও শিক্ষক সংকট প্রকট।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি
শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল না থাকায় তাদের মাসিক ব্যয় বাড়ছে। বাসাভাড়া এবং যাতায়াত খরচ বহন করা অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, ২০০ ছাত্রীর জন্য মাত্র একটি টয়লেট ব্যবহার করতে হয়।
এমন সংকট শুধু চাঁদপুর নয়
নেত্রকোনা, নীলফামারী, নওগাঁ, মাগুরা এবং সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজেও একই রকম সংকট বিরাজ করছে। এই মেডিকেল কলেজগুলোতে নিজস্ব ভবন নেই। শিক্ষার্থীরা দুর্বল অবকাঠামো ও অপর্যাপ্ত শিক্ষকসংকটের মধ্যে পড়াশোনা করছে।
সরকারের ভাবনা ও সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সম্প্রতি বলেন, “কিছু মেডিকেল কলেজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সেগুলো বন্ধ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অন্য কলেজে সংযুক্ত করার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এই সংকট সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে। তবে, কবে সমস্যার সমাধান হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থার এই করুণ চিত্র উন্নতির দিকে ধাবিত না হলে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা দীর্ঘ মেয়াদে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!