স্টাফ রিপোর্টার - ইমরান হক।।
সকাল থেকেই সূর্যের চোখ রঙানি। জ্যোষ্ঠের কাঠ ফাটা রোদে ঘরে বসে থাকায় দায়। প্রচ- রোদে পিচ ঢালা পথ যেনো উনুনে পরিণত হয়েছে। গরম আর ঘামে সবার ত্রাহি অবস্থা। যদিও মাথা পুড়ছে সূর্যের তাপে, দুই পাশে কংক্রিটের ভবন আর পায়ের নিচে উত্তপ্ত পিচ ঢালা পথ। এরই মধ্যে মাথায় লাল, হলুদ আর সবুজ ক্যাপ পরে হাতে হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ব্যানার-প্লেকার্ড, হাটি হাটি পায়ে খ- খ- মিছিল নিয়ে বজ্র কণ্ঠে স্লোগান তুলে নয়াপল্টন অভিমুখে ছুটছেন তরুণরা। সবার লক্ষ্য বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ডাকা তারুণ্যের সমাবেশ যোগ দেয়া।
২৮ মে বুধবার বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করছেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।
তরুণদের কাছে টানতে মাসজুড়েই সারাদেশের ৪টি বড় শহরে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ নামে কর্মসূচি ঘোষণা করে এই তিন সংগঠন। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়ার পর গতকাল বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ছিল সর্বশেষ সমাবেশ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ২টায় কর্মসূচি শুরু করার কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয় বেলা সাড়ে ৩টায়। তবে এই সমাবেশে অংশ নিতে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ (সাংগঠনিক) থেকৈ সকাল থেকেই দলে দলে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায়। বেলা ১২টার সময়ই নির্ধারিত সমাবেশস্থলকে কেন্দ্র করে একদিকে কাকরাইল মসজিদ, শান্তিনগর-মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, পুরানা পল্টন, অপর দিকে ফকিরাপুল-দৈনিক বাংলা, আরামবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মূল সড়ক ও আশপাশের অলিগলিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। তরুণ-তরুণীদের ঢলে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ শীর্ষক সমাবেশে রূপ নেয় মহাসমাবেশে। রাজধানী ঢাকাও দেখলো তরুণদের ঐতিহাসিক জনসমুদ্র।
বিকাল সাড়ে তিনটায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। বিকাল ৪টায় লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এই সময় তুমুল করতালির মধ্যে নেতাকর্মীরা তাকে অভিনন্দন জানালে হাত তুলে শুভেচ্ছা জানান তিনি। যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন। সমাবেশর মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, এমরান সালেহ প্রিন্স, আব্দুস সালাম আজাদ, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শামা ওবায়েদ, মীর সরফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, নজরুল ইসলাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, তাইফুল ইসলাম টিপু, আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজসহ অসংখ্য নেতাকর্মী।
সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা, সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ডের অসংখ্য নেতাকর্মী নির্বাচনের দাবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এবং কপালে জাতীয় পতাকা বেঁধে সমাবেশে আসেন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগরে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থেকে কয়েক হাজার মানুষ, কেরাণীগঞ্জ থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক ও সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায়ের নেতৃত্বে, নরসিংদী থেকে বিএনপি নেতা রফিকুল আমিন ভুইয়া রুহেলের নেতৃত্বে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতাকর্মী রঙ-বেরঙয়ের টিুপি ও গেঞ্জি পড়ে মহাসমাবেশে অংশ নেন। বিকেলের দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করেও নেতাকর্মীরা সমাবেশে ছিলেন। নয়া পল্টনের বাইরে শান্তিনগর-কাকরাইল মোড়, ফকিরাপুল-আরামবাগ, পুরানা পল্টন, সেগুনাবাগিচা, বিজয়নগর, দৈনিক বাংলা পর্যন্ত এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। মহসামবেশ ঘিরে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়। এসময় অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. মো. মেহেদী হাসান, ডা. এএসএম রাকিবুল ইসলাম আকাশ ও ডা. তানজীম রুবাইয়্যাত আফিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, তরুণ-যুবকদের সংগঠিত করতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের উদ্যোগে মে মাস জুড়ে সারাদেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগকে ৪টি বৃহত্তর বিভাগে ভাগ করে চারটি বড় বিভাগ ও শহরে ‘সেমিনার’ এবং ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করার কর্মসূচির ঘোষণা করেছিল। যা গতকাল নয়াপল্টনের সমাবেশের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি শেষ হলো। গত ৯ ও ১০ মে চট্টগ্রাম, ১৬ ও ১৭ মে খুলনা এবং ২৩ ও ২৪ মে বগুড়া সেমিনার ও সমাবেশ হয়েছে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!