শীতকাল প্রকৃতির এমন একটি সময়, যা মুমিনদের জন্য বিশেষ বরকতের মৌসুম হিসেবে পরিচিত। গরমের পর শীত আসে এবং এই ঋতুকে বিশেষভাবে ইবাদতের জন্য উপযুক্ত সময় বলা হয়। বিশেষ করে রোজা রাখা ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের জন্য শীতকাল আদর্শ।
শীতকালে ইবাদতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস ও সাহাবিদের উক্তি
শীতকালকে ইবাদতের মৌসুম বলে উল্লেখ করে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) বলেন,
‘শীতকালের সিয়াম হলো অনায়াসলব্ধ গনিমত সম্পদের মতো।’ (তিরমিজি: ৭৯৭)
অন্য এক হাদিসে তিনি আরও বলেন,
‘শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল। এর দিন ছোট হয়, ফলে মুমিন দিনের বেলা রোজা রাখে এবং রাত দীর্ঘ হয়, ফলে মুমিন রাতের বেলা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে।’ (সুনানে কুবরা: ৮৪৫৬)
আলেমরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, শীতকালে রোজা রাখা সহজ, কারণ দিন ছোট হওয়ায় ক্ষুধা কম লাগে এবং ঠান্ডার কারণে তৃষ্ণাও তেমন হয় না।
সাহাবিদের শীতকাল নিয়ে অনুভূতি
সাহাবিরাও শীতকালকে ইবাদতের বিশেষ সময় বলে বিবেচনা করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন,
‘শীতকে স্বাগত জানাই, যখন বরকত নাজিল হয়, রাতগুলো প্রার্থনার জন্য দীর্ঘ হয় এবং রোজার জন্য দিনগুলো ছোট হয়।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একবার সাহাবিদের উদ্দেশে বলেছিলেন,
‘আমি কি তোমাদের অনায়াসলব্ধ গনিমতের সন্ধান দিব না?’
তারা রাজি হলে তিনি বলেন,
‘শীতকালে রোজা রাখা অনায়াসলব্ধ গনিমতের মতো।’ (সুনানে কুবরা: ৮৪৫৫)
ইবন উমর (রা.)-এর মতে,
‘শীতকাল আবেদদের গনিমতের সময়।’ (হিলইয়া: ১/৫১)
পূর্বসূরিদের ইবাদতে শীতকালের প্রভাব
ইসলামের প্রাচীন মনীষীরাও শীতকালকে ইবাদতের বিশেষ সময় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হাসান বসরি (রহ.) বলতেন,
‘শীতকাল কতই না উত্তম সময়! এর দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা সহজ এবং রাত দীর্ঘ হওয়ায় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া সহজ হয়।’
উবাইদ ইবন উমায়ের (রহ.) মুসলিমদের শীতকালে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও নফল রোজা রাখার পরামর্শ দিতেন।
ইবাদতের সেরা সময়
শীতকালের প্রার্থনার দীর্ঘ রাত এবং রোজার ছোট দিন মুসলিমদের জন্য বিশেষ উপহার। তাই, এই সময়কে ইবাদতের বসন্তকাল বলা হয়ে থাকে। প্রতিটি মুমিনের উচিত শীতকালকে ইবাদতের জন্য কাজে লাগানো এবং বরকতের এই সময়কে যথাযথভাবে উদযাপন করা।
এই খবরটি শীতকালীন ইবাদতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে পাঠকদের উৎসাহিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!