ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর জন্য ত্যাগ, সংযম ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের এক মহান নিদর্শন। এই ঈদে কোরবানি করা যেমন ইবাদত, তেমনি এর আগের দিনগুলোও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল ও প্রস্তুতির সময়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোরবানির আগে কী কী করণীয় রয়েছে, যা আমাদের ঈদকে আরো বরকতময় ও সঠিকভাবে পালন করতে সাহায্য করবে।
১. নখ, চুল ও অবাঞ্চিত লোম কাটা থেকে বিরত থাকা
যারা কোরবানি করবেন, তারা জিলহজের ১ তারিখ থেকে পশু জবাই না হওয়া পর্যন্ত নখ, চুল ও অবাঞ্চিত লোম না কাটাই সুন্নত। এটি কোরবানির ইবাদতের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের প্রতীক।
২. কোরবানি পশু কেনার সময় সতর্কতা
পশু কেনার আগে নিশ্চিত হতে হবে:
পশু সুস্থ ও নির্দিষ্ট বয়সের।
ত্রুটিমুক্ত (অন্ধ, খোঁড়া বা অসুস্থ নয়)।
সততা বজায় রেখে কেনাবেচা করতে হবে—মিথ্যা কথা বা শপথ একেবারেই নিষিদ্ধ।
৩. কোরবানির নিয়ত ও ইখলাস ঠিক রাখা
আমাদের নিয়ত শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হতে হবে। লোক দেখানো কোরবানি, প্রদর্শন বা প্রতিযোগিতা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
৪. ঈদের নামাজের পূর্বে কোরবানি নয়
ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করা হারাম। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করল, তার কোরবানি গ্রহণযোগ্য নয়।”
৫. পশুর প্রতি যত্ন ও দায়িত্বশীলতা
পশুকে ভালো খাবার, ছায়া ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দিন।
নির্যাতন করা বা অহেতুক বাঁধা রাখা নিষিদ্ধ।
গলায় ঘণ্টি বা অলংকার ঝোলানো অনুচিত।
৬. ভাগে কোরবানির প্রস্তুতি ও সতর্কতা
যারা গরু বা উটে ভাগে কোরবানি করবেন:
আগে ভাগীদারদের ঠিক করুন।
নিশ্চিত হন, কেউ হারাম উপার্জনের টাকায় শরিক হচ্ছেন না।
স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি।
৭. মাংস বণ্টন ও দান খয়রাতের মানসিকতা
ইসলাম অনুযায়ী:
এক ভাগ নিজের জন্য
এক ভাগ আত্মীয়/বন্ধুদের জন্য
এক ভাগ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতে হয়।
এতে সমাজে সমতা ও সৌহার্দ্য বাড়ে।
স্মরণযোগ্য উপদেশ:
"তোমাদের কোরবানির পশুর রক্ত বা গোশত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং পৌঁছে তার তাকওয়া।” (সূরা হজ্ব: ৩৭)
কোরবানির ঈদ শুধু উৎসব নয়, বরং এটি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও সাম্যের শিক্ষা দেয়। প্রস্তুতি যেন শুধু বাহ্যিক না হয়ে, হয় আন্তরিক ও আত্মিক ইবাদতের প্রতিচ্ছবি—এটাই হোক আমাদের মূল লক্ষ্য।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!