নবীজি হজরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুধু উম্মতের জন্যই নয়, বরং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। তাঁর জীবনের প্রতিটি অংশই আমাদের জন্য আদর্শ। দিন হোক কিংবা রাত, তিনি আল্লাহর ইবাদত ও কোরআনের তিলাওয়াতে কাটাতেন। এমনকি ঘুমানোর আগে পর্যন্ত তিনি এমন কিছু আমল করতেন, যা আজও মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়ে আছে।
ঘুমানোর আগে নবীজি (সা.) এর বিশেষ আমল
নবীজি (সা.) ঘুমানোর আগে বিশেষ কিছু আমল করতেন, যা তাঁকে আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তার ছায়ায় রাখত। তাঁর এসব আমল ছিল অত্যন্ত নিয়মিত ও গুরুত্বপূর্ণ। নিচে নবীজির (সা.) রাতের আমলগুলো তুলে ধরা হলো:
- অজু করা: নবীজি (সা.) ঘুমানোর আগে পবিত্রতা রক্ষার জন্য অজু করতেন।
- আয়াতুল কুরসি ও সুরা বাকারা শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত: তিনি নিরাপত্তা ও বরকতের জন্য এই আয়াতগুলো পড়তেন।
- সুরা মুলক তিলাওয়াত: প্রতিরাতে সুরা মুলক তিলাওয়াত করতেন এবং ইসতেগফার করতেন, যা তাঁর নেয়ামত ও সুরক্ষা বাড়িয়ে দিত।
- তিন কুল পড়া: সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস তিনবার করে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুঁ দিতেন।
- সুরা কাফেরুন ও সুরা ফাতিহা পড়া: রাতে নিজেকে শিরক থেকে রক্ষা করতে সুরা কাফেরুন পড়তেন এবং সুরা ফাতিহার বরকত লাভের জন্য এটি তিলাওয়াত করতেন।
- তাসবিহ: তিনটি তাসবিহ, অর্থাৎ “সুবহানাল্লাহ,” “আলহামদুলিল্লাহ,” এবং “আল্লাহু আকবার” উচ্চারণ করতেন।
- বিশেষ দোয়া ও ডান কাতে শোয়া: ঘুমানোর আগে দোয়া পড়ে ডান পাশে শোয়াটা তাঁর নিয়মিত অভ্যাস ছিল।
শেষ রাতের আমল: বিশেষ গুরুত্ব
নবীজি (সা.) শেষ রাতের আমলকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। এই সময়ে তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন, আল্লাহর জিকির করতেন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা রাতের ইবাদতের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “নিশ্চয়ই রাতে জাগরণ প্রবৃত্তি দমনে অধিক সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণে অনুকূল” (সুরা মুজ্জাম্মিল: ৬)।
আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার সময়
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আমাদের রব প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। তিনি বলেন, ‘কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দেব; কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব’” (বুখারি: ১১৪৫)।
এই রাতের আমলগুলো আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত লাভের এবং অন্তরের প্রশান্তি অর্জনের বিশেষ মাধ্যম। নবীজির (সা.) জীবনের এই দিকগুলো আমাদের শিখিয়ে দেয় কিভাবে রাতের সময়টাকে ইবাদতে কাটিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!