আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী রহ.: ইলম, আদব ও প্রজ্ঞায় ভরা এক আলোকিত জীবনের অধ্যায়
বাংলাদেশের সমকালীন ইসলামী অঙ্গনের প্রজ্ঞাবান আলেম আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী রহ. ছিলেন শান্তস্বভাব, বিনয়ী এবং নৈতিকতার এক আদর্শ প্রতীক। ১৯৫৮ সালের ২০ ডিসেম্বর কুমিল্লার চড্ডা গ্রামে জন্ম নেওয়া এই আলেমের জীবন ছিল ইলম, তাকওয়া ও রহমতের পথে অবিচল যাত্রা।
আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী রহ. ১৯৫৮ সালের ২০ ডিসেম্বর কুমিল্লার চড্ডা গ্রামে ধর্মপরায়ণ এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী আব্দুল ওয়াদুদ (রহ.) ছিলেন ধার্মিক ও সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি। পিতার কাছেই তার ইলমের প্রাথমিক পাঠ শুরু হয়। পরিবারের ইলমি পরিবেশ তার চরিত্রে বিনয়, নৈতিকতা ও আল্লাহভীতি গড়ে তোলে।
শৈশব ও প্রারম্ভিক শিক্ষা
শৈশব থেকেই ইসলামি আদব ও জ্ঞানের প্রতি তার ঝোঁক ছিল গভীর। ১৯৬৫ সালে পিতার কাছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি নাঙ্গলকোট হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং সেখানে পূর্ণাঙ্গ হিফজ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে শরিয়তপুরের নন্দনসার মাদরাসায় ভর্তি হয়ে বড় ভাই আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.-এর তত্ত্বাবধানে হেদায়াতুন্নাহু পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
শিক্ষা: দেওবন্দে প্রাপ্ত বরকতময় সোহবত
মধ্যম শ্রেণি শেষে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি যান চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায়, যেখানে জালালাইন পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। এরপর আরও উঁচু জ্ঞানলাভে আগ্রহী হয়ে পাড়ি জমান দারুল উলূম দেওবন্দে। সেখানে তিনি ১৯৮৫ সালে সুনামের সঙ্গে ফারেগ হন। দারুল উলূমে তিনি পেয়েছিলেন মাওলানা রিয়াসাত আলী বিজনূরী রহ., মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ., মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ আজমীসহ বহু আলেমের সোহবত, যা তার ইলমি দৃষ্টিভঙ্গিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
কর্মজীবন ও দায়িত্বশীলতা
দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে তিনি চৌধুরীপাড়া মাদরাসায় মুহতামীম হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরবর্তীতে জামিয়া মাহমুদিয়া ইসহাকিয়া মানিকনগরে দীর্ঘদিন নায়েবে মুহতামীম ও শায়খে ছানী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রাজধানীর শাহজাহানপুর মসজিদের দীর্ঘদিনের খতিব হিসেবে তার ইসলাহি বয়ান সাধারণ মানুষের হৃদয়ে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল।
দরস ও ছাত্রদের প্রতি তার মমত্ব
তার দরস ছিল গভীর, ভাষা ছিল পরিষ্কার ও হৃদয়ছোঁয়া, আর বক্তব্যে ছিল আল্লাহভীতি ও নৈতিকতার প্রেরণা। ছাত্রদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল পিতাসুলভ; লেখকও তার কাছে নূরুল ঈযাহ, বেকায়া ও মেশকাতের দরসে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য স্মরণ করেছেন।
ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র
তিনি ছিলেন অত্যন্ত নম্র, শান্ত ও সংযত স্বভাবের। অভাবগ্রস্ত মানুষের প্রতি তার সহানুভূতি ছিল দৃষ্টান্তমূলক। তার অন্তর্দৃষ্টি, প্রজ্ঞা ও বিনয় তাকে সমকালীন আলেমদের মাঝে বিশেষভাবে আলাদা করেছে।
পরিবার
পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন সুখী ও পরিতৃপ্ত। তার ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে। দুই ছেলে উচ্চশিক্ষিত হয়ে ইলমি অঙ্গনে কাজ করছেন। তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও তার ইলম, আদব, প্রজ্ঞা ও ছাত্রদের প্রতি মমত্বই আজ তার সত্যিকার উত্তরাধিকার।
শেষ পর্যন্ত তিনি রেখে গেছেন জ্ঞানের আলো, নৈতিকতার দিশা এবং প্রজন্মের জন্য আদর্শ জীবনচর্চার একটি বিশুদ্ধ নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। আমিন।
লগইন
বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা কুদ্দুস কাসেমী রহ.: সংক্ষিপ্ত জীবনী | ছবি সংগ্রহীত
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!