ইসলামে পশু–পাখিকে কষ্ট দেওয়া গুরুতর অন্যায় হিসেবে বিবেচিত। বরং যেকোনো প্রাণীর প্রতি দয়া ও অনুকম্পা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। হাদিসের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়—একটি কুকুরকে পানি পান করানোও জান্নাতের কারণ হতে পারে, আবার খাবার না দিয়ে একটি বিড়ালকে হত্যা করলে জাহান্নামও হতে পারে।
যেকোনো প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া, খাবার–পানীয় না দেওয়া বা খারাপ আচরণ করা অমানবিক কাজ। সমাজে অনেকেই কুকুর, বিড়াল কিংবা বিভিন্ন পাখি পোষেন এবং তাদের প্রতি মায়া–দয়া দেখান। কেউ কেউ অসহায় কোনো প্রাণীকে আশ্রয় দিয়ে তার জীবনও বাঁচান। এভাবেই মানুষের মনে এসব প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়।
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে—এক নারী একবার তৃষ্ণার্ত একটি কুকুরকে পানি পান করান। তার এ দয়ার কাজের সুবাদে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তিনি জান্নাতি হন। বিপরীতে এক ইবাদতকারী এক বিড়ালকে বন্দী রেখে খাবার–পানি না দেওয়ায় সেটি মারা যায়। এর শাস্তি হিসেবে তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম।
দয়া করলে আল্লাহও দয়া করেন
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন—নবীজি (সা.) বলেন,
“যারা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করে, আল্লাহও তাদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো, আসমানের মালিক তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”
(আবু দাউদ, তিরমিজি)
মুহাদ্দিসরা ব্যাখ্যা করেছেন—এ দয়া শুধু মানুষের প্রতিই নয়; জমিনের সব পশু–পাখি, প্রাণী ও জীবজন্তুর প্রতিও প্রযোজ্য।
আরও একটি বর্ণনায় সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করেন—জীবজন্তুর প্রতি দয়া করলেও কি পুণ্য আছে? নবীজি (সা.) বলেন,
“প্রত্যেক প্রাণীকে দয়া করলে তাতেই সওয়াব আছে।”
(সহিহ বুখারি)
নবীজির (সা.) প্রাণীদের প্রতি দয়া
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন—এক সফরে নবীজি (সা.) দেখলেন কিছু সাহাবি একটা পাখির ছানা নিয়ে নিয়েছেন। পাখিটি ছানাদের জন্য ব্যাকুল হয়ে উড়ছিল। নবীজি (সা.) বললেন,
“কে এ পাখিটিকে কষ্ট দিল? তার ছানা ফিরিয়ে দাও।”
আরেকবার তিনি দেখলেন—পিঁপড়ার গর্ত পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। তিনি বললেন,
“আগুনের মালিক আল্লাহ ছাড়া আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়া কারো জন্য বৈধ নয়।”
ইসলামের শিক্ষা
উপরের বর্ণনাগুলো থেকে স্পষ্ট—ইসলাম অসহায়, অবলা সব প্রাণীর প্রতি দয়া, সদয় আচরণ ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়। অকারণে কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া বা হত্যা করা নিষিদ্ধ। তবে যে প্রাণী অপরিহার্য ক্ষতি করে বা মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকি—সে ক্ষেত্রে ইনসাফের সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি আছে, কষ্ট দিয়ে নয়।
অতএব বিনা কারণে প্রাণী হত্যা বা নির্যাতন শুধু নিষ্ঠুরতা নয়—গুরুতর গুনাহও বটে। মুসলমানের উচিত সব প্রাণীর প্রতিই দয়া ও সহনশীল হওয়া।
লগইন
পশু–পাখির প্রতি দয়া ও অত্যাচার সম্পর্কে ইসলাম কী বলে | ছবি সংগ্রহীত
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!