কোরবানি শুধু ইসলামের অংশ নয়, বরং মানব ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকেই মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায় হিসেবে এই বিধান জারি ছিল। কোরবানি শব্দটি এসেছে আরবি "কুরবান" থেকে, যার অর্থ হলো "নিকটবর্তী হওয়া"। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে, এটি এমন এক ইবাদত—যার মাধ্যমে জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নির্ধারিত সময়ে (১০ থেকে ১২ জিলহজ) মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট পশু জবাই করেন।
আদিকাল থেকেই কোরবানির বিধান চালু ছিল। হজরত আদম (আ.)-এর দুই সন্তান হাবিল ও কাবিল কোরবানি করেছিলেন। হাবিল একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কোরবানি দেন, আর কাবিল শস্য কোরবানি করেন। তখন আকাশ থেকে আগুন নেমে হাবিলের কোরবানি কবুল করে নেয়—যা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে কবুলের নিদর্শন।
ইসলামে কোরবানির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরীক্ষার কাহিনি। আল্লাহর আদেশে পুত্রকে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়ে তিনি ত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করেই মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর কোরবানি পালন করে থাকে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
"কোরবানি তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত।" (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন,
"আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির বিধান দিয়েছি, যেন তারা আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকে নির্দিষ্ট পশু জবাইয়ের সময় তাঁর নাম স্মরণ করে।" (সুরা হজ: ৩৪)
কোরবানির মাধ্যমে কেবল পশু জবাই নয়, মূলত মানুষের মধ্যে ত্যাগ, আন্তরিকতা ও তাকওয়া জাগ্রত হয়। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির এক অনন্য মাধ্যম, যা ব্যক্তি জীবনে আত্মশুদ্ধি ও সামষ্টিক জীবনে সহমর্মিতার বার্তা দেয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!