বহুদিন ধরে বিশেষজ্ঞরা যে সতর্কবার্তা দিয়ে আসছিলেন, সেই আশঙ্কাই সত্যি হতে শুরু করেছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের আংশিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই। বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপারেশনের ফলে সুন্দরবনের পাশের পশুর ও মাইদারা নদীসহ আশেপাশের বনাঞ্চল বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। এই দৈনিকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২২ সালের শেষ দিকে কার্যক্রম শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত সেখানে কোনো বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপন করা হয়নি, যার ফলে অনির্বাচিত বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। এটি পরিবেশ অধিদপ্তরের (ডিওই) শর্তের লঙ্ঘন এবং এটি মৎস্য ও জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে, এমনকি মাছ খাওয়ার জন্যও অনিরাপদ।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চারটি পর্যায়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছাকাছি ১৪টি স্থানে পানির নমুনা সংগ্রহ করে তারা দেখেছে, নদীর পানিতে পারদের মাত্রা সরকার নির্ধারিত ০.০০০১ মিগ্রা/লিটারের চেয়ে বেশি, যা ০.০০১ মিগ্রা/লিটারে পৌঁছেছে।
উল্লেখ্য, সিইজিআইএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইটিপি-এর সিভিল কাজ শেষ হলেও মেকানিকাল ও ইনস্ট্রুমেন্টাল কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। পারদ দূষণ জলজ বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এবং জুপ্ল্যাঙ্কটন পারদ শোষণ করে যা মাছের মধ্যে জমা হয় এবং তাদের প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। এ ধরনের মাছ খেলে মানুষের শরীরেও গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা যারা নদীতে গোসল করেন বা দৈনন্দিন কাজে এই পানির ব্যবহার করেন, তারাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
২০১৭ সালে গ্রিনপিসের এক গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছিল যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত পারদ প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাছের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে সুন্দরবনের এত কাছাকাছি এই প্রকল্পটি গড়ে তোলা কত বড় ভুল ছিল।
তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক দাবি করেছেন যে ইটিপি দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর রয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে পরিবেশের এমন ক্ষতি কেন হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করা প্রয়োজন। অবিলম্বে পরিবেশগত ক্ষতি কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়ে ভাবা উচিত যাতে সুন্দরবনের অমূল্য পরিবেশ ব্যবস্থা রক্ষা পায়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!