মোঃ আসাদুজ্জামান , বরগুনা
বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবু সালেহকে অপসারনের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইউপি সদস্যসহ এলাকাবাসী। মঙ্গলবার দুপুর ২ টায় ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে ইউপি সদস্য মোঃ রেজাউল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু মামলাজনিত কারনে রেজাউল ইসলাম কারাগারে থাকায় ২নং প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল আলমকে দায়িত্ব পালন করতে না দিয়ে ডৌয়াতলা ইউপি সচিব মোঃ রাজিবুল ইসলাম কোন সভা না ডেকে ইউপি সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে রেজুলিউশন বই এবং প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনী ফরমে স্বাক্ষর নিয়ে ইউপি সদস্য মোঃ আবু ছালেহকে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন।
মানববন্ধনে ছাত্রদের পক্ষ থেকে মোঃ ঈসা বলেন, আবু ছালেহকে যেভাবে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে সেটা সাধারণ ছাত্র জনতা কোনভাবেই মেনে নেবে না। আমরা আবু ছালেহর অপসারন চাই।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ নুর আলম বলেন, চক্রান্তকরে কিছু বিএনপি নেতারা মিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাধ্য করেছে আবু ছালেহকে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে। আমরা সাবেক প্যানেল বহাল চাই। এটাই ডৌয়াতলা ইউনিয়নবাসীর দাবি।
২নং প্যানেল চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য মোঃ শফিকুল আলম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোঃ রাজিবুল ইসলাম প্রকল্প বাস্তবায়নের মিটিংয়ের কথা বলে আমাদেরকে বামনা উপজেলা পরিষদে যাওয়ার জন্য বলে।
আমরা তার কথামতো উপজেলা পরিষদে যাওয়ার পথে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোঃ রাজিবুল ইসলাম ও ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আবু ছালেহ সহ বিএনপির কিছু নেতা মিলে বামনা সদর ইউনিয়নের সোনাখালী বাজারে ইউপি সদস্যদের আটকে রেজুলিউশন খাতায় স্বাক্ষর নেয়। কোন নিয়মনীতি না মেনে, কোন মিটিং না ডেকে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোঃ রাজিবুল ইসলাম নিজের ইচ্ছামত খাতায় রেজুলিউশন লিখে প্যানেল সাজায়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই এবং আগের যেই প্যানেল ছিল সেই প্যানেল পুনর্বহাল চাই।
৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ নুরুজ্জামান নিজাম বলেন, গত শনিবার দিন ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোঃ রাজিবুল ইসলাম আমাকে বললেন যে উপজেলা পরিষদে মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য। আমি রওনা দিয়ে সচিব কে ফোন দিলে তিনি আমাকে সোনাখালি বাজারে যেতে বলেন।
আমি সোনাখালি বাজারে যাওয়ার পরে আমাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন এখানে স্বাক্ষর করেন। আমি তখন সচিবকে বললাম এই কাগজ এখানে কেন এটাতো পুরোনো প্যানেল বাদ দিয়ে নতুন প্যানেল করার রেজুলিউশন বই। তখন সচিব সাহেব আমাকে বললেন ইউএনও স্যার হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে প্যানেল চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম জেলে থাকার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় ইউএনও স্যারের নির্দেশে আমি এটা করেছি। তখন আমি দেখলাম রেজুলিউশন বইয়ে ৭ জন মেম্বারের স্বাক্ষর করা।
বাকি ছিলাম আমরা চারজন। তখন আমি সচিবকে বললাম আমার সিনিয়র যে মেম্বাররা আছে তাদের সাথে কথা না বলে আমি স্বাক্ষর করতে পারি না। পরে আমরা উপজেলা পরিষদে গেলে ইউপি সদস্য মোঃ শফিকুল আলম ও হেমায়েত মৃধার সাথে আলোচনা করে বললাম যেহেতু তারা সাতজন স্বাক্ষর দিয়েছে বাকি আমরা তিনজন, এখন কি করবো? তখন তারা বললেন আমরা ইউএনও স্যারের সাথে পাল্লা দিয়ে কিছু করতে পারবো না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা তিনজন রেজুলিউশন খাতায় স্বাক্ষর করি।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোঃ রাজিবুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল ইমরান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, পরিষদের নতুন প্যানেল তৈরী করতে রেজুলিউশন খাতায় স্বাক্ষরসহ আমার কাছে জমা দিয়েছে এবং এর আগে বেশ কয়েকবার ইউপি সদস্যদের নিয়ে আমার অফিসে মিটিং হয়েছে।
তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই রেজুলিউশন খাতায় স্বাক্ষর করেছে। এখন যদি তারা তাদের কথা উল্টে ফেলে তাহলে আইন সাপোর্ট করবে না। এর পরেও যদি কোন জটিলতা থাকে এটা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠালে তিনি চাইলে বাদ দিতে পারবেন। এখন যেটা করা হয়েছে এটা আইনগতভাবে ঠিক আছে। এখানে আইনের কোন ব্যাত্যয় ঘটেনি।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!