বিদায়ী বছরের আর্থিক হিসাব ভালো দেখাতে বেসরকারি খাতের তিন ব্যাংক—ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংককে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বিশেষ ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অর্থ দিয়ে বছরের শেষ দিনে ব্যাংক তিনটি তাদের চলতি হিসাবের ঘাটতি পূরণ করে উদ্বৃত্ত দেখিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, এই বিশেষ ধারের অর্থ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দেওয়া হয় এবং আজ বুধবার তা ফেরত নেওয়া হবে। তবে এ ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ১১ শতাংশ সুদ গুনতে হবে।
- ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের আর্থিক সংকট
গত ১৫ বছরের বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ব্যাংক তিনটি বড় ধরনের তারল্যসংকটে ভুগছে।
ইসলামী ব্যাংক: চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় যুক্ত হয়ে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে তুলে নেয়, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৫০ শতাংশ।
ন্যাশনাল ব্যাংক: মালিকানায় থাকা সিকদার গ্রুপ ছাড়াও বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, মাইশা, সাইফ পাওয়ারটেকসহ আরও অনেক গ্রুপ ঋণের নামে বড় অঙ্কের অর্থ তুলে নিয়েছে, যার একটি বড় অংশ খেলাপি হয়েছে।
এবি ব্যাংক: দীর্ঘদিন ধরে তারল্যসংকটে থাকা ব্যাংকটি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ব্যাংকটিতে বড় ধরনের জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
- বিশেষ ধার ও তারল্য সহায়তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ইসলামী ব্যাংক পেয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক পেয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংক পেয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া দৈনন্দিন তারল্য চাহিদা মেটাতে এবি ব্যাংককে আরও ২০০ কোটি টাকা আলাদাভাবে ধার দেওয়া হয়েছে।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ঋণ অনিয়মের কারণে এই তিন ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে তাদের সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারছে না। ফলে বিশেষ ধার দেওয়ার উপায় ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের অনিয়ম এবং তারল্য সংকট সামাল দিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ব্যাংকিং খাত আরও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!