মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জের হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের ধড্ডা পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বানচাল করার লক্ষ্যে প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তারের সাথে অসদাচারণ ও আক্রমন করার চেষ্টা এবং তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপ-প্রচারের অভিযোগে মো. রাকিব দেওয়ান নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
গত সোমবার (৬ নভেম্বর) মো. রাকিব দেওয়ানকে (২৪) আটক করা হয়। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহ রাকিবসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩জনকে বিবাদী করে প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তারের স্বামী, ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন লিটু হাজীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি গত শনিবার (৪ নভেম্বর) এ অভিযোগটি করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর পূর্বে নবম শ্রেণির একজন ছাত্রীকে ইভটিজিং সংক্রান্ত বিষয়ে মো. রাকিব দেওয়ানকে বিচারের সম্মুখীন করিয়ে ছিলেন প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তার। যার ফলে প্রধান শিক্ষকের সাথে তার মনমানিল্য ছিল। গত শনিবার (৪ নভেম্বর) বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা বানচালের লক্ষ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রাকিব ও অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা ওই বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান করে প্রধান শিক্ষকের সাথে খারাপ আচরণ করাসহ অকথ্য ভাষায় গালমন্দ এবং তাকে আক্রমনের চেষ্টা করে। এতে ওই শিক্ষক (সহকারী প্রধান শিক্ষক) নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়।
এই ঘটনায় বিদ্যালয়ের দাপ্তরিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এরপরও রাকিব ক্ষ্যান্ত না হয়ে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তারের নামে অশালিন কথা প্রচার করে। এতে রাকিবসহ অজ্ঞানামাদের বিরুদ্ধে স্ত্রীর পক্ষে হাজীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মো. জাকির হোসেন লিটু।
অভিযোগ দায়ের ও রাকিব হোসেনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ বলেন, বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু নসর নিপুকে দায়িত্ব দেওয় হয়েছে।
উল্লেখ, গত ৪ নভেম্বর শনিবার ধড্ডা পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। ওই পরীক্ষায় আবেদনকৃতদের মধ্যে ৩ জন উল্লেখিত বিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে নুরুন নাহার ও মিজানুর রহমানের পক্ষে অবস্থান নেন স্থানীয় ও এলাকাবাসীদের মধ্যে দুইটি পক্ষ। তাই, এ নিয়োগ পরীক্ষাকে প্রভাবিত করতে ওই দিন বিদ্যালয়ে দুই পক্ষের লোকজন জড়ো হন।
পরে পরীক্ষা শুরুর আগেই ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য যেন উপস্থিত না হন, এজন্য তাদেরকে বাধাগ্রস্ত এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষকদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষকের সাথে অসদাচরণসহ হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ডিজির প্রতিনিধি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ আনেন একপক্ষ।
ওই সময়ে স্থানীয় জসিম মুন্সী ও শাহাজান বেপারীসহ কয়েকজন ডিজির প্রতিনিধিসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তার তাদেরকে সন্ত্রাসী বলেছেন এবং নিয়োগ পরীক্ষায় প্রভাবিত করতে তিনি একজন প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাছাড়া তাঁর সময়ে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য হারিয়েছে। তাই, নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতসহ প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
এরপর স্থানীয়দের হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলায় বিদ্যালয়ের সভাপতিসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের সর্ব-সম্মতিক্রমে ডিজির প্রতিনিধি মো. সিরাজুল ইসলাম পাটওয়ারী নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে সংবাদকর্মীদের বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর আগে এরেজমেন্ট প্রক্রিয়ায় সমস্যা হয়েছে। তাই আজকের (শনিবার) নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হলো এবং স্থগিত নিয়োগ পরীক্ষা পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হবে।
ওই সময়ে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম জাহাঙ্গীর আলম, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন, সদস্য মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী ও প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তার এবং হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু নসর নিপু, ইউপি সদস্য হাবিব মোল্লাসহ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের অন্যান সদস্য, স্থানীয় ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তার বলেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে। আমিও চাই একজন যোগ্য লোক এ পদে আসুক। কিন্তু ওই দিন সকালে বেশ কিছু লোক বিদ্যালয়ের সম্মুখে অবস্থান করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেন এবং তারা হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা শুরু করেন। আমি ওই শিক্ষকদের ফোন পেয়ে বিদ্যালয়ের সামনে গেলে তারা আমার সাথেও খারাপ আচরণ করেন।
বিদ্যালয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি উপজেলার মফস্বল বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। আমি ২০১০ সালে যোগদান করার পর এবং এই সরকারের আমলে ৪র্থ তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবন, পুরানো ভবনের একটিতে তিন তলা, অন্যটিতে দুই তলা ও ঘাটলা নির্মাণ, মাঠ ভরাট, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার, লাইব্রেরী, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, বিজ্ঞানাগার ও পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল স্থাপন, টয়লেট নির্মাণসহ আরো অনেক কাজ করা হয়েছে। যা আগে ছিলো না। পড়ালেখা ও ফলাফলের দিক থেকে জেএসসি ও এসএসসিতে ধারাবাহিক সাফল্য এবং জিপিএ-৫ সহ বিদ্যালয়ে শতভাগ পাশও রয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তার।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!