জামালপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে বিনামূল্যে দরিদ্র রোগীদের সেবা দেওয়া একটি শীততাপনিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স এখন আর সেই কাজ করছে না। তিন বছর আগে পৌরসভার তৎকালীন মেয়র এবং জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে এই অ্যাম্বুলেন্সটি দান করেছিলেন। কিন্তু মেয়রের পদ হারানোর পর সেটি ফেরত নিয়ে নাম পরিবর্তন করে এখন বাণিজ্যিক ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ছানোয়ার হোসেন মেয়র থাকাকালীন “হ্যালো মেয়র” নামে একটি সেবা চালু করেছিলেন। দরিদ্র রোগীদের জন্য ২৪ ঘণ্টার এই অ্যাম্বুলেন্স সেবার খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ ছিল পৌরসভার তত্ত্বাবধানে। চালকের বেতন এবং জ্বালানি খরচও পৌরসভার তহবিল থেকে বহন করা হতো।
কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মেয়রের পদ হারান ছানোয়ার। এরপরই তাঁর লোকজন পৌরসভার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরত নিয়ে যান। দানের অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে লেখা “জামালপুর পৌরসভা” মুছে দিয়ে “সিদ্দিক অ্যাম্বুলেন্স” নাম দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এটি পরিচালিত হচ্ছে।
পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, ছানোয়ার হোসেন মেয়র থাকাকালীন পৌরসভা তাঁর একক সিদ্ধান্তে পরিচালিত হতো। অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর সময়কালের নিয়োগপ্রাপ্ত, ফলে এখনো তাঁদের সঙ্গে ছানোয়ারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, “অ্যাম্বুলেন্সটি দান করা হয়েছিল, তবে কোনো লিখিত কাগজপত্র ছিল না। তাই সেটি ফেরত নেওয়া হয়েছে।” তবে স্থানীয়দের দাবি, এ ঘটনায় পৌরসভার কর্মকর্তাদেরও ভূমিকা রয়েছে।
সম্প্রতি দুর্ঘটনার কবলে পড়া অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতের জন্য একটি ওয়ার্কশপে পাঠানো হয়। কিন্তু মেরামতের পর ছানোয়ার হোসেনের লোকজন এটি নিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্কশপের মালিকও জানিয়েছেন, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ছানোয়ারের লোকজনের যোগসাজশেই এটি ফেরত নেওয়া হয়।
জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক মৌসুমী খানম বলেন, “অ্যাম্বুলেন্সটি দান করা হয়েছিল মৌখিকভাবে, কোনো লিখিত চুক্তি হয়নি। এ কারণে এটি ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
স্থানীয়রা বলছেন, ছানোয়ার হোসেন যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাম্বুলেন্সটি দান করেছিলেন, সেটি ফেরত নেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, “এভাবে দানের একটি সম্পত্তি ফেরত নেওয়া অত্যন্ত অন্যায়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
অ্যাম্বুলেন্সটি বর্তমানে সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানায় চলে গেছে, যিনি ছানোয়ার হোসেনের চাচাতো ভাই। এই ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!