প্রেরক মোঃ বায়েজিদ
একটি ফৌজদারি (ক্রিমিনাল) মামলা সাধারণত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। নিম্নে প্রতিটি ধাপ বিস্তারিতভাবে উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করা হলো—
ধাপ ১: অপরাধ সংঘটন ও অভিযোগ দায়ের
যখন কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন ভুক্তভোগী বা অন্য কেউ পুলিশ বা আদালতে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন।
🔹 উদাহরণ:
মোঃ রফিক তার দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে তাকে ছিনতাইকারীরা আক্রমণ করে টাকা-পয়সা ও মোবাইল নিয়ে যায়। তিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করলেন।
ধাপ ২: এফ.আই.আর (FIR) রেকর্ডকরণ
গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রথমিক তথ্য বিবরণী (FIR - First Information Report) গ্রহণ করে এবং মামলা রুজু করে।
🔹 উদাহরণ:
রফিক থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ সেটিকে FIR হিসেবে গ্রহণ করে এবং দণ্ডবিধির ৩৯২ ধারার অধীনে ডাকাতির মামলা রুজু করে।

ধাপ ৩: তদন্ত ও প্রাথমিক গ্রেফতার
পুলিশ তদন্ত শুরু করে, প্রমাণ সংগ্রহ করে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে পারে।
🔹 উদাহরণ:
পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও সাক্ষীদের বক্তব্য নিয়ে সন্দেহভাজন রবিউলকে গ্রেফতার করে।
ধাপ ৪: অভিযুক্তকে আদালতে উপস্থাপন ও রিমান্ড/জামিন শুনানি
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করতে হয়।
🔹 উদাহরণ:
রবিউল আদালতে হাজির হলে পুলিশ রিমান্ড চায়, কিন্তু আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়।
ধাপ ৫: চার্জশিট দাখিল বা মামলা বাতিল
তদন্ত শেষে যদি অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে চার্জশিট (Charge Sheet) দাখিল করা হয়। প্রমাণ না পেলে মামলা বাতিল করা হতে পারে।
🔹 উদাহরণ:
তদন্ত শেষে পুলিশ রবিউলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে, যেখানে সাক্ষ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।
ধাপ ৬: বিচারকার্য শুরু (ফ্রেমিং অব চার্জ)
আদালত চার্জশিট পর্যালোচনা করে অভিযোগ গঠন করে। এরপর সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি শুরু হয়।
🔹 উদাহরণ:
আদালত ডাকাতির অভিযোগ গঠন করে এবং মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে।
ধাপ ৭: সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক
সরকারি কৌঁসুলি (PP) এবং আসামির পক্ষের আইনজীবী আদালতে নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
🔹 উদাহরণ:
রফিক ও অন্যান্য সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দেয় যে তারা রবিউলকে ডাকাতি করতে দেখেছে। রবিউলের পক্ষের আইনজীবী তাকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করেন।
ধাপ ৮: রায় প্রদান (Judgment)
সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত দোষী সাব্যস্ত বা খালাস দিতে পারে।
🔹 উদাহরণ:
আদালত রবিউলকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
ধাপ ৯: আপিল (যদি প্রয়োজন হয়)
দণ্ডিত ব্যক্তি উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন।
🔹 উদাহরণ:
রবিউল হাইকোর্টে আপিল করে সাজা কমানোর আবেদন জানায়।
উপসংহার:
এভাবেই একটি ক্রিমিনাল মামলা অভিযোগ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত রায়ের মাধ্যমে শেষ হয়। বিচারপ্রক্রিয়া ন্যায়বিচারের স্বার্থে দীর্ঘ সময় নিতে পারে।
লেখক
সামছুল আরেফিন
আইন বিভাগ
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!