আকাশের নিচে ছাতার মতো মাথা, গায়ের ভেতরে রক্তের মতো লাল রস—দেখলে মনে হয় কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি থেকে উঠে আসা জীবন্ত চরিত্র। এই বিস্ময়কর গাছটির নাম ড্রাগনস ব্লাড ট্রি। আরব সাগরের মাঝে অবস্থিত ইয়েমেনের সোকোত্রা দ্বীপের গর্ব এটি। কিন্তু এখন, এই প্রজাতির গাছ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দুঃস্বপ্নে দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার মানুষ।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, অনিয়ন্ত্রিত পশুপালন আর বছরের পর বছর ধরে চলা সংঘাতে ধ্বংসের মুখে এই অমূল্য প্রজাতি। একসময় যে গাছ সারা দ্বীপজুড়ে ছায়া ছড়াত, আজ তা ঠাঁই নিয়েছে বিলুপ্তির আশঙ্কার তালিকায়।
গাছ রক্ষায় মানুষের লড়াই
উঁচু মালভূমির ধুলোময় বাতাসে ক্ষীণ এক চারাগাছকে আগলে রাখেন সিনা কায়বানি। তাঁর নিজের হাতে গড়া নার্সারিতে প্রতিটি গাছ যেন সন্তানসম। তিনি বলেন, “এদের মরতে দেখা মানে নিজের সন্তানকে হারানোর মতো।”
সিনা ও তাঁর মতো আরও কিছু নিবেদিতপ্রাণ মানুষ এখন জীবন উৎসর্গ করেছেন এই গাছ রক্ষার কাজে। তাদের চোখে, এই গাছ শুধু বৃক্ষ নয়—সোকোত্রার আত্মা।
সোকোত্রা: এক নিঃসঙ্গ স্বর্গ
‘গ্যালাপাগোস অব ইন্ডিয়ান ওশান’ নামে পরিচিত সোকোত্রা দ্বীপে ৮২৫টিরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। ২০০৮ সালে ইউনেসকো দ্বীপটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
সেখানে রয়েছে বোতল গাছ—যার স্ফীত কাণ্ড যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ভাস্কর্য। আছে ফ্র্যাঙ্কিনসেন্স গাছ, যার প্যাঁচানো ডালপালা আকাশের দিকে মেলে ধরা হাতের মতো।
তবে এসবের মাঝেও সবচেয়ে রহস্যময়, সবচেয়ে মোহময় গাছ হলো ড্রাগনস ব্লাড ট্রি। অনেক পর্যটক এই গাছ দেখতে আসেন, যেন কল্পলোকের বনে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার পর্যটক সোকোত্রা সফর করেন এই অপার্থিব গাছের টানে।
পর্যটন ও জীবিকা, দুটোই ঝুঁকিতে
সোকোত্রা দ্বীপে স্থানীয় গাইড ছাড়া ভ্রমণ করা নিষেধ। পর্যটকদের থাকতে হয় দ্বীপবাসীর পরিচালিত ক্যাম্পে। এই ব্যবস্থায় দ্বীপের মানুষও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হন।
তবে ড্রাগনস ব্লাড ট্রি হারিয়ে গেলে, শুধু একটি প্রজাতিই নয়, একটি দ্বীপের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও আত্মপরিচয়ও ঝুঁকিতে পড়বে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!