ভ্রমণ প্রতিবেদক
ভ্রমণের শুরুটা হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে, সহধর্মিণীর জোরাজুরিতে। গন্তব্য পাহাড়ের রানি দার্জিলিং। ঢাকা থেকে রাতের বাসে রওনা দিয়ে ভোরে পৌঁছাই বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে। হালকা কুয়াশার ভেজা রোদের মধ্যে সেই সকালটা ছিল চিরচেনা নয়, বরং কিছুটা রূপকথার মতো। প্রাতঃরাশ করি বিখ্যাত ‘বুড়ির হোটেল’-এ।
সকাল ৯টায় ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ভিসার চাপ কম থাকলেও কাউন্টারের স্বল্পতার কারণে সময় লেগে যায়। তবে বর্ডারে ঘটল এক মধুর ঘটনা—এক বিজিবি সদস্য, আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট দেখে চেনা নাম পেয়ে বলেন, “আরে! আমরাও তো একই এলাকার।” সেখান থেকেই যেন শুরু হলো আত্মার বন্ধনে জড়ানো এক ভ্রমণ।
ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে আমরা যাত্রা করি শিলিগুড়ির পথে। ছোট্ট কিন্তু আরামদায়ক বাসে যেতে যেতে চোখে পড়ে জলপাইগুড়ির চা–বাগান আর সবুজের সমারোহ। মনে পড়ে যায় সমরেশ মজুমদারের ‘উত্তরাধিকার’ উপন্যাসে বর্ণিত ডালাসের সেই চা–বাগানের দৃশ্য।
শিলিগুড়ি পৌঁছে বহু চিন্তা-ভাবনার পর সিদ্ধান্ত নিই, মিরিক লেক না দেখে দার্জিলিং যাওয়া হবে না। দুপুরে তড়িঘড়ি খাওয়া সেরে রিজার্ভ গাড়িতে রওনা দিই পাহাড়ি পথে। চালক জানিয়ে দিলেন, “পাহাড় কিন্তু এক জীবন্ত মরীচিকা”—এই শব্দটা যেন পরে অনেক বার মনে পড়েছে।
৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পেরিয়ে বিকেলের আলোয় আমরা পৌঁছে যাই মিরিক লেকে। পৌঁছেই শুরু হয় হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ঠান্ডা হাওয়া, পাইনবনের পাশের পায়ে হাঁটা পথ, আর অপার শান্তির সুমেন্দু লেক—সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো।
লেকের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা **৮০ ফুট দীর্ঘ ‘ইন্দ্রাণী সেতু’**তে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই চোখে পড়ে এক অপূর্ব রংধনু। বহু বছর পরে এমন একটি নিখুঁত রংধনু দেখে মন ভরে ওঠে। পরে জেনে নিই, এই সেতু থেকে প্রায়ই রংধনুর দেখা মেলে বলেই স্থানীয়রা একে ‘রংধনু সেতু’ বলেন।
সন্ধ্যা নামতেই রওনা হই লেপচাজগতের দিকে। তবে মন পড়ে রইল মিরিক লেকে। আর চাইলেই কি ‘মোমো লাভার’দের মন থামে? তাই রাস্তার ধারের এক ধাবায় প্রথমবারের মতো চেখে দেখি অরিজিনাল দার্জিলিং মোমো—ঝাল চাটনি আর ডাল-মরিচের সেই ঘ্রাণ আজও মন ভোলায়।
এই ছিল দার্জিলিং যাত্রার প্রথম দিন। ক্লান্তি, প্রকৃতি, ভালোবাসা আর বিস্ময়ে মোড়া প্রতিটি মুহূর্ত রয়ে গেছে মনের ক্যানভাসে আঁকা এক চিরস্থায়ী ছবির মতো।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!