লন্ডন বৈঠকের পর রাজনীতিতে যেন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। একদিকে উচ্ছ্বসিত বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো—অন্যদিকে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপি নেতৃত্বে দৃশ্যমান ইতিবাচক সুর। এখন দলটির প্রধান লক্ষ্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। সেইসঙ্গে দীর্ঘদিন পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা ঘিরেও দলীয় কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র আগ্রহ।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ কয়েকটি দল লন্ডন বৈঠক ও তার পরবর্তী ঘোষণায় নিজেদের উপেক্ষিত মনে করছে। তাদের অভিযোগ—এই বৈঠকের পর সরকার ও বিএনপি যেন একসাথে অবস্থান নিচ্ছে, যা বাকিদের প্রতি ‘রাজনৈতিক অবজ্ঞা’র ইঙ্গিত দেয়।
লন্ডনের ঐতিহাসিক বৈঠকে নির্বাচনের সময় নির্ধারণসহ রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও আলোচনায় চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যু কিংবা রাখাইন প্রদেশে ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এমনকি বিএনপি যে তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছিল, সেখান থেকেও সরে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ওই তিনজনের একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং তারেক রহমানকে স্বাগত জানান।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু সংকটকালে ঐক্যবদ্ধ হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
তবে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—এক সপ্তাহ আগেও যিনি এপ্রিলের নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তিনি হঠাৎ করে কেন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পথে হাঁটলেন? বৈঠকে ঠিক কী এমন আলোচনা হয়েছে, যা সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য করল?
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শুধু নির্বাচন নয়—ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনা, সংস্কার, এমনকি জাতি গঠনের দিকনির্দেশনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি মনে করে, অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগানো যেতে পারে।
অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন মনে করছে, শুধু বিএনপিকে গুরুত্ব দিয়ে রাজনৈতিক সমতা নষ্ট করা হচ্ছে। জামায়াত জানিয়েছে, একক বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনের ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ছোট দলগুলোকে মাঠে রাষ্ট্রীয় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হতে পারে।
এ নিয়ে বিএনপির আমীর খসরু বলেন, “বিএনপি সবচেয়ে বড় দল। অন্য দলগুলো আমাদের সমপর্যায়ের নয়—এটা বাস্তবতা। সময় ঠিক হয়েছে, সবাই সম্মত হয়েছে। এখানে অবজ্ঞার কিছু নেই।”
বিএনপির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য লন্ডন বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখছে। তারা বলছে, এর মাধ্যমে পারস্পরিক সন্দেহ দূর হয়েছে, নির্বাচনের পথ পরিষ্কার হয়েছে। এখন বিএনপি তাদের পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্বাচন কেন্দ্রিক করেই সাজাবে।
সংক্ষেপে:
🔹 লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপির নজর নির্বাচন ঘিরে
🔹 অধ্যাপক ইউনূসের ভূমিকা ঘিরে নতুন আস্থার জায়গা
🔹 ক্ষুব্ধ জামায়াত ও এনসিপি—তাদের মতে, উপেক্ষিত অন্য দলগুলো
🔹 নির্বাচনী মাঠে সম্ভাব্য নতুন জটিলতা তৈরির শঙ্কা
🔹 বিএনপির অবস্থান: ঐক্যবদ্ধ হই, ভুলভ্রান্তি ভুলে এগিয়ে যাই\
এই নতুন রাজনৈতিক গতি এবার কতটা বদল আনবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে—সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!